দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিমদের বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে তাই কোরবানির পশুর হাট সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটছে ইজারাদারদের। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় এবার ১৭টি স্থানে বসছে অস্থায়ী পশুর হাট। আগামী ৬ জুলাই থেকে দার খুলবে এসব হাটের। বেচাবিক্রি চলবে পাঁচদিন।
ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে হাটের প্রস্তুতি। সেই সঙ্গে হাটের প্রবেশপথে ক্রেতাদের আকর্ষণে বড় করে লেখা ‘গরু-ছাগলের হাট’সহ গেট, মূল মঞ্চ (খাজনার স্থান), প্যান্ডেল, তোরণসহ মাঠের মধ্যে চলছে বাঁশের খুঁটি বসানোর কাজ। অনেকেই আবার সময় নিয়ে সাজাচ্ছেন হাট।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সিলেটসহ কয়েকটি স্থানে বন্যার কবলে পড়া পশুগুলোকে রাখতে আগেভাগেই প্রস্তুত করা হচ্ছে পশুর হাট। আর গত বছরগুলোয় হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা মাথায় রেখেই এবার আগে থেকেই তারা সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন।
শুক্রবার (২৪ জুন) রাজধানীর অস্থায়ী আফতাবনগর পশুর হাট, ভাটারা-সাইদনগর পশুর হাটসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ দিন আফতাবনগরের অস্থায়ী পশুর হাটের মূল মঞ্চ (খাজনার স্থান) নির্মাণ করছিলেন আসাদ মিঞা। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, গত সপ্তাহ থেকে কাজ করছি। প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। তবে বাঁশ বাসানোর পর লাইটিংসহ আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
একই চিত্রের দেখা মিলে ভাটারা-সাইদনগর পশুর হাটে গিয়েও। সেখানেও বসানো হচ্ছে বাঁশের মঞ্চ। নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত মধু মাঝি ঢাকা মেইলকে জানান, এসেছেন জামালপুর থেকে। আগে মাটির কাজ করলেও কোরবানির ঈদ ঘিরে কাজে এসেছেন তিনি। তার মতো আরও অন্তত ৩৫ জন একই কাজে ব্যস্ত। যারা অস্থায়ী এই পশুর হাটটি সাজিয়ে তুলতে কাজ করছেন।
তবে, গাবতলীর পশুর হাটের প্রস্তুতি চোখে পড়ার মতো। এজহার নামে এক শ্রমিক বলেন, স্থায়ী এই হাটটিতে ঈদে বেচাবিক্রি বাড়ে। এছাড়া শহরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট হওয়ায় অনেকেই দেখতেও আসেন।
প্রস্তুতির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। এরই মধ্যে বাড়তি অংশে বাঁশ দিয়ে জায়গা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া লাইটিং, বাড়তি পশু রাখার স্থান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বুথ স্থাপনের কাজও চলছে। তবে পশুর হাট খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলেও জানান এই শ্রমিক।
এদিকে, ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র মতে- চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী ১০ জুলাই দেশে ঈদুল আজহা হতে পারে। ফলে ঈদে কোরবানিকে ঘিরে ঢাকার দু সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকছে মোট ১৮টি হাট। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে আটটি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় বসবে ১০টি। হাটগুলোতে বেচাবিক্রি চলবে ঈদের আগের চারদিন এবং ঈদের দিন। সবমিলিয়ে মোট পাঁচদিন বেচাবিক্রি চলবে।
ডিএসসিসির অধীনে ১০টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে- আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা।
এছাড়া ডিএনসিসির অধীনে সাতটি হাটের মধ্যে রয়েছে- ভাটারা-সাইদনগর পশুর হাট, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তরদিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই থেকে এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গা এবং ৩০০ ফিট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল-যমুনা হাউজিং কোম্পানির খালি জায়গা।
এসব অস্থায়ী হাট ছাড়াও গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু বিক্রি হবে।
ডিএইচডি/আইএইচ