শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ইলিশ ছাড়া এবারও বর্ষবরণের প্রস্তুতি

মাহাবুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ইলিশ ছাড়া এবারও বর্ষবরণের প্রস্তুতি

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র দুয়ারে বছর ঘুরে আবারও কড়া নাড়ছে প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা নতুন সন ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে চলছে জোর প্রস্তুতি। বৈশাখ উদযাপনকে সামনে রেখে বাঙালির ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠা তৈরির ধুম পড়েছে। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখে নিম্ন-মধ্যবিত্তের পূরণ হচ্ছে না পাতে ইলিশ তোলার খায়েশ। কেননা ইলিশের দামের উত্তাপে তাদের হাত পুড়ে যাওয়ার দশা।

ভোক্তারা অভিযোগ করে বলছেন, এবারও ইলিশের বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রয়েছে। সরবরাহ কমের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির তথ্য বলছে, প্রতি বছর দেশে সাড়ে ৫ লাখ থেকে ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। ২০২৪ সালে দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত এই ইলিশ থেকে মাত্র ৩ হাজার মেট্রিক টন রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। যা মোট উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা কয়েকবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রপ্তানি। সে হিসেবে এবার দেশে ইলিশের সরবরাহ বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে মিলছে ভিন্ন চিত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবার বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ থাকার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছেন। বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি চোরাই পথে ইলিশ পাচার হওয়ায় বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আশেপাশের খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাজারে সর্বনিম্ন ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে, যা খুচরা পর্যায়ে গিয়ে হাজার টাকা ছাড়াচ্ছে। আধা কেজির ওপরে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। এছাড়া ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশের কেজি আড়াই হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।


বিজ্ঞাপন


1695128081.0_copy

ক্রেতারা বলছেন, সারাবছর তো নিম্ন আয়ের মানুষরা ইলিশের খোঁজই রাখেন না। পহেলা বৈশাখে শখের বসে ইলিশ কিনতে এসেও দাম শুনেই অন্যদিকে ঘুরে যেতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকার আসায় অনেকেই আশা করেছিলেন সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। কম দামে এবার অন্তত ইলিশ পাতে তুলতে পারবেন। তবে সেই আশার গুড়ে বালি পড়ছে বাজারে এসে।

আব্দুল হাই নামের এক ক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সংসারের সব খরচ চালিয়ে ইলিশ খাওয়া হয়ে ওঠে না। এবার তো রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম কম ছিলো। একারণে ভেবেছিলাম, হয়ত ইলিশের দামও কম হবে। কিন্তু বাজারে এসে দাম কমার কোনো লক্ষণই দেখলাম না। বাসায় মেয়েকে বলে এসেছিলাম, আজ ইলিশ কিনব। কিন্তু দাম শুনে আর পারিনি। কাতল মাছ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছি।

আরেক ক্রেতা পারভেজ রনি ঢাকা মেইল বলেন, দাম কম হলে হয়তো হাফ কেজি ইলিশ কিনতাম। কিন্তু ৫০০ টাকা দিয়ে হাফ কেজি মাছ কিনলে অন্য বাজার তো হবে না। তাই মুরগিই কিনেছি। সাধ থাকলেও সাধ্য নাই।

তবে মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নদীর পানি এখন কম। এখন ইলিশের ভরা মৌসুম না। এছাড়া জাটকা ধরা বন্ধ করা হয়েছে গত ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এজন্য বাজারে সরবরাহ কম। বাজারে নতুন ইলিশ নেই। ফ্রিজিং করা ইলিশই বিক্রি করা হচ্ছে।

মাছ ব্যবসায়ী আশরাফ আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন ইলিশের সিজন না। মৌসুমের এই সময়টায় জাটকা পাওয়া যায়। সেটি ধরাও এখন বন্ধ। একারণে মাছের দাম বেশি।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোল্লা এমদাদুল্যাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রম রয়েছে। যেখানে মার্চ-এপ্রিলে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। আবার বঙ্গোপসাগরেও এ সময়ে ইলিশ কম ধরা পড়ে। বৃষ্টি হওয়ার পরে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর আমাদের দেশে ইলিশের চাহিদা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে গত বছর ইলিশ উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৫ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন। সেটির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

এমআই/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর