এখন বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যমুনা সেতু। কিছুদিন পরেই এর অবস্থান হয়ে যাবে দ্বিতীয়। দীর্ঘতম সেতুর উপাধি চলে যাবে পদ্মার কাছে। আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু। এটিই হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। কিন্তু বিশ্বে এর অবস্থান কত?
শুরুতে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক। দৈর্ঘ্যের দিক বিবেচনায় সেতুর তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। বিশ্বের দীর্ঘতম ১০ সেতুর ৭টির অবস্থানই সেখানে। আর এই ১০টির মধ্যে ৯টিই রয়েছে এশিয়া মহাদেশে। চলুন শুরুতে দীর্ঘতম এত সেতুগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞাপন
১. ডানইয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন
আজ থেকে এক যুগ আগে নির্মিত হয়েছিল এই ব্রিজ। ২০১০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০১১ সালে তা উন্মুক্ত করা হয়। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুর তকমা ধরে রেখেছে চীনের এই সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ মিটার। ১০২.৪ মাইল দীর্ঘ সেতুটি তৈরিতে সময় লেগেছিল মাত্র ৪ বছর।
১০ হাজারের বেশি শ্রমিক সেতু তৈরির কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১০ সালে মূল সেতুর কাজ শেষ করা হয়। ২০১১ তে শুরু হয় রেললাইন নির্মাণের কাজ। সেই বছর তা উন্মুক্ত করা হয় এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু হিসেবে বিশ্ব রেকর্ড করে ডানইয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড সেতু। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়। সেতুটি নির্মাণে ৮.৫-১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়।
বিজ্ঞাপন
২. চাংহুয়া-কোয়াশিউং রেলসেতু, তাইওয়ান
পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু চাংহুয়া-কোয়াশিউং রেলসেতু। এটি তাইওয়ানে অবস্থিত। সড়কপথের পাশাপাশি তাইওয়ানের দ্রুতগতির রেলপথ এই সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ মিটার। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে জনসাধারণের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত এই সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে প্রায় ২০ কোটি যাত্রী।
৩. ক্যান্ডি গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন
পৃথিবীর তৃতীয় দীর্ঘতম সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ মিটার। চীনে অবস্থিত সেতুটি বেইজিং ও সাংহাইকে সংযুক্ত করেছে। ভূমিকম্পে অটলভাবে দাঁড়িয়ে থাকার সক্ষমতার লক্ষ্য নিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে ক্যান্ডি গ্র্যান্ড ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৪. তাইয়ানজিন গ্র্যান্ড সেতু, চীন
এই সেতুটিও চীনে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ মিটার (৭০.৬ মাইল)। সেতুটি রেলপথের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনের লাংফাং ও কুইংজিয়েনের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে এটি। চার বছর কাজের পর ২০১০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৫. উইনান উইহি গ্র্যান্ড সেতু, চীন
পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘতম সেতু এটি। এর দৈর্ঘ্য ৭৯ হাজার ৭৩২ মিটার। ২০০৮ সালে যখন এটি নির্মিত হয়েছিল তখন বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে নাম লিখিয়েছিল। পরবর্তীতে সেই স্থান হারিয়ে বর্তমানে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।
৬. হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও সেতু, চীন
২০১৮ সালের অক্টোবরে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেতুটি। এর দৈর্ঘ্য ৫৪ হাজার ৭১৭ মিটার। হংকং আর চীন- দুইটি দেশকে যুক্ত করার কারণে এই সেতুটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়। ৫৫ কিলোমিটারের এই সেতুটি বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুর পাশাপাশি সমুদ্র টানেলও। এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসেতুর খেতাবও রয়েছে হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও সেতুর ঝুলিতে। ১৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে সেতুটি তৈরি করা হয়।
৭. ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে, থাইল্যান্ড
বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় সপ্তম স্থানে থাকা এই সেতুটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৫৪ হাজার মিটার। ২০০০ সালে নির্মিত হয় এই সেতুটি। ২০০৮ পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু। ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ১৮ লক্ষ কিউবিক মিটার কনক্রিট লেগেছিল।
৮. বেইজিং গ্র্যান্ড সেতু, চীন
চীনের এই সেতুটিও মূলত রেলপথ। এর দৈর্ঘ্য ৪৮ হাজার ১৫৩ মিটার। ২০১০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করার পর ২০১১ সালে এতে যান চলাচল শুরু হয়। হাই-স্পিড বুলেট ট্রেন চলাচল করে সেতুটিতে।
৯. লেক পন্টচারট্রেইন কজওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র
পৃথিবীর দীর্ঘতম ১০ সেতুর মধ্যে একমাত্র এই সেতুটিই এশিয়ার বাইরে অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৮ হাজার ৪৪২ মিটার। দুই পাশে দুইটি সেতু নিয়ে লেক পন্টচারট্রেইন কজওয়ে গঠিত। প্রথম সেতুটি ১৯৫৬ সালে নির্মিত হয়। যান চলাচল বাড়লে দ্বিতীয় সেতু যুক্ত করা হয়। ১৯৬৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষে যা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
১০. লাইন-১, উহান মেট্রো সেতু, চীন
চীনের উনার শহরে অবস্থিত এই সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৩৭ হাজার ৭৮৮ মিটার। একে পুরোপুরি সেতু অবশ্য বলা যায় না। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম একটানা মেট্রো সিস্টেম ভায়াডাক্ট। ৩৭ কিলোমিটারের সেতুটি ১৯৯৫ সালে চালু হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালে আবার তা উন্মুক্ত করা হয়।
পদ্মা সেতুর অবস্থান কত?
পৃথিবীতে অসংখ্য সেতু রয়েছে। দৈর্ঘ্যের দিক বিবেচনায় পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে বিশ্বের ১২২তম দীর্ঘ সেতু। সুইডেনের অল্যান্ড ব্রিজকে পেছনে ফেলে এই জায়গা দখল করে নেবে এটি।
এনএম/এজেড