স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর নয় মাস পেরিয়ে গেছে। দেশের বৃহত্তম এই সেতু দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলছে সব ধরনের যান। তবে বন্ধ আছে মোটরসাইকেল চলাচল। বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দেশের সব সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক স্থাপন করা পদ্মা সেতুতে এখনো নিষিদ্ধ রয়েছে বাইক চলাচল।
স্বপ্নের সেতুটি চালুর পর প্রথম ঈদুল ফিতর হচ্ছে এবার। আসন্ন ঈদে সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি মিলতে পারে বলে বাইকরা স্বপ্ন দেখলেও শেষ পর্যন্ত তাদের আশা গুড়েবালি হচ্ছে। ঈদের আগে বাইক চলাচলের অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৯ মার্চ) পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর আরও চার সপ্তাহের জন্য স্ট্র্যান্ডওভার (মুলতবি) করেছেন হাইকোর্ট। এই সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখে পরবর্তী আদেশ দেবেন বলে জানায় আদালত। তার মানে আরও এক মাস পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের সম্ভাবনা নেই। ফলে স্বপ্নের সেতু দিয়ে বাইক চালিয়ে পার হতে বাইকারদের আরও অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। পরদিন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দেশের দীর্ঘতম সেতুটি। প্রথম দিন বিপুল বাইক সেতুটি দিয়ে পার হয়। টাকার বিনিময়ে বাইকে করে সেতু পার করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এরমধ্যেই ওইদিন রাতে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন মারাত্মক আহত হন। দুর্ঘটনার ওই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এমন অবস্থায় পরদিন সেতুটি দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। একটি রিট খারিজ হয়। অপর একটি রিটের শুনানি হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে করা রিটের শুনানি ৮ সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছিল। আজকে শুনানি করা হয়েছে। শুনানি শেষে আবারও চার সপ্তাহের জন্য সরকারপক্ষকে সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের এমন আদেশে এবারের ঈদে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে না তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বুধবার আদালত থেকে বেরিয়ে রিটকারীদের আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার ঢাকা মেইলকে বলেন, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে কিনা, এ বিষয়ে আদালত সরকারকে ৮ সপ্তাহের সময় দিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে সরকার একটি চিঠি দিয়েছে আমাদের। চিঠিতে আমরা পজিটিভ সাড়া পেয়েছি। আজকে সরকারকে আবার চার সপ্তাহের সময় দিলেন আদালত। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে সরকার জবাব দেবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে কি না।
বিজ্ঞাপন
তৈমুর আলম আরও বলেন, দেশের সব সেতুতেই মোটরসাইকেল চলে, কিন্তু এখানে চলাচলে সরকারের বাধা। এটা ঠিক না। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নয়, অনেক বাসও দুর্ঘটনা ঘটেছে।
রিটকারী আরেক আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আজকে আদালত যে সিদ্ধান্ত দিল সে হিসেবে ঈদের আগে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলবে না। কারণ সরকার মোটরসাইকেল চলাচলের সিদ্ধান্ত নিতে আরও ৪ সপ্তাহের সময় পেল।
বাইকারদের ক্ষোভ
সব ধরনের যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলে মোটরসাইকেল চলার অনুমতি কেন দেওয়া হচ্ছে না এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বাইক চলাচল করতে সমস্যা না হলেও পদ্মা সেতুতে কেন নিষিদ্ধ থাকবে। আসন্ন রোজার ঈদের সেতুটি দিয়ে বাইক চলাচলের অনুমতি মিলতে পারে বলে আশায় ছিলেন বাইকাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈদের অনুমতি না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
খুলনার বাসিন্দা ও মোটরসাইকেল চালক মো. বাহাউদ্দিন ইমরান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দেশের সব সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করলেও পদ্মা সেতুতে বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি এক ধরনের বৈষম্য। দুর্ঘটনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঠিক হয়নি। তাহলে অন্য সেতুতে কি দুর্ঘটনা ঘটে না।’
আরেক বাইক চালক সাখাওয়াত ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। সব রাস্তায় মোটরসাইকেল চলে, তাহলে পদ্মা সেতুতে বন্ধ থাকবে কেন? এখানে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হোক। মানুষের যাতায়াত আরাম হোক।’
এআইএম/এমআর