স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ডানা মেলছে শনিবার (২৫ জুন)। পদ্মার দুই পাড়ে সেতুর জমকালো উদ্বোধনকে ঘিরে সাজসাজ রব। সবার অপেক্ষা কখন খুলবে সেতুর দ্বার। কিন্তু মাওয়া ঘাটে চলাচলকারী স্পিডবোট মালিক ও চালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের টেনশনের যেন শেষ নেই।
দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে চলা এই পেশায় জড়িতরা এখন পড়েছেন ভবিষ্যতের চিন্তায়। স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনে যারা একসময় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করতেন না, তারাই এখন সুর নরম করে বলছেন সরকার যেন বিকল্প কোনো উপায় বের করে দেয়। তাদের দাবি, অন্তত একটি বা একাধিক রুটে তাদের চলাচলের সুযোগ যেন রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত করা মানুষের দুর্ভোগের অপর নাম ছিল মাওয়া-কাওরাকান্দি ফেরিঘাট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর মিলতো ফেরিতে ওঠার সুযোগ। তাই সময় বাঁচাতে অনেকেই বেছে নিতেন স্পিডবোট যাত্রা।
চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিলেও সবসময়ই নেওয়া হত বাড়তি ভাড়া। বিশেষ করে উৎসব-পার্বনে যেন এই ঘাটে চলতো অনিয়মের প্রতিযোগিতা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পদ্মা পারাপারকে ঘিরে গড়ে ওঠা নৌ সিন্ডিকেটের লোকজনের সিদ্ধান্তই ছিল শেষ কথা! অনিয়মের প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবে যাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক ছিল মাওয়া-কাওড়াকান্দি ঘাটে।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। পদ্মা সেতু চালুর দিন যত ঘনিয়ে আসতে থাকে, নিজেদের রুটি রুজির মাধ্যম টিকিয়ে রাখতে নিয়ম শৃঙ্খলা মানতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্পিডবোট মালিক-শ্রমিকরা। যাত্রার শুরুতে যাত্রীদের সবাইকে দেওয়া হচ্ছে লাইফ জ্যাকেট। আগে যেমন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হত এখন সেই প্রবণতাও কমেছে।

বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও মালিক পক্ষ ও ইজারাদারদের অনাগ্রহের কারণে নিবন্ধনের আওতায় আনা যায়নি স্পিডিবোটগুলোকে। তবে কিছুদিন আগে লঞ্চের মতো স্পিডবোটের চালকরাও নিজেদের কাজগপত্র মাওয়ার বন্দর কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শিপন শিকদার নামের একজন স্পিডবোট চালক ঢাকা মেইলকে বলেন, সামনের দিনে কি হবে আমাদের এখনো কিছু জানি না। এই ঘাট চালু থাকবে না বন্ধ করে দেওয়া হবে তাও বুঝতেছি না।
তিনি বলেন, ‘আগে তো আমাদের কাগজপত্র ছিল না। এখন কাগজপত্র আছে। বন্দর অফিসারের কাছে জমা দিছি। যদি লঞ্চ চালকদের সঙ্গে আমাদের জন্যও কোনো রুটের ব্যবস্থা করে দেয় তাইলে জীবনটা বাঁচবে।’
এ নৌরুটে যাতায়াতকারী একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্পিডবোট চালকদের দৌরাত্ম্য দেখা যায় পদ্মা নদীতে। তারা কোনো রকম নিয়মকানুন ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমত স্পিডবোট চালায়। ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি নেয়। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয় চালকদের হাতে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় অসংখ্য যাত্রীর প্রাণহানি ঘটলেও চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি। এজন্য তাদের বেপরোয়া ভাবও কমেনি।

সাজ্জাদুর রহমান নামের একজন বেসরকারি চাকুরিজীবী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একবার ঈদে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পার হতে গিয়েও চালকদের কটু কথা শুনতে হয়েছিল। অকারণে বাজে ব্যবহারের শিকার হওয়ার ঘটনাটি এখনো দাগ কেটে আছে।’
স্পিডবোট চালকদের দুর্বব্যহারের এমন ঘটনা অনেকে নানা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলেও ধরেছেন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও কোনো বিহীত হয়নি এমন অভিযোগও আছে।
সবশেষ গতবছর অনুমতি না থাকলেও লকডাউনের মধ্যে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে একটি স্পিডবোট। এতে চালকসহ ২৬ জন প্রাণ হারায়। চালক ও মালিকদের ভাষ্যমতে, মাওয়া ঘাট দিয়ে কয়েকটি রুটে দুইশোর বেশি স্পিডবোট চলাচল করে। কিন্তু এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই রুট পারমিট নেই।

বুধবার (২২ জুন) মাওয়ার স্পিডবোট ঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বিষয় নিয়ে এখনো কিছু বলা হয়নি। শুনছি ইকোপোর্ট হবে। সেটা হলে হয়তো কিছু স্পিডবোট চলবে। কিন্তু কবে কাজ শুরু হবে আর কবে শেষ হবে তা কেউ জানি না।’
ঘাট সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে ঘাটের ইজারা নেওয়া। কয়েক কোটি টাকায় ইজারা নেওয়ায় তা তুলতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা ভাড়া নেওয়া হত।
যাত্রীদের কাছ থেকে সবসময় বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মানুষ বেশি টাকা দিয়ে ঘাট নেয়। ওই টাকা তোলার জন্য অনেক সময় কিছু ভাড়া বেশি নেওয়া হয়।
বিইউ/এএস



































































































































































































































































































