পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আনবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শুক্রবার (৩ জুন) পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত ‘সীউইড মেলার’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
শ ম রেজাউল করিম বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত মাছ-মাংস, দুধ, ডিমসহ অন্যান্য কৃষিসামগ্রী রাজধানী ঢাকায় পৌঁছানো বা রফতানির সুযোগ ছিল না। পদ্মা সেতুর সংযোগের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত মাছসহ অন্যান্য কৃষিসামগ্রী দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় যেতে পারবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠা হবে।
প্রক্রিয়াজাত করা সামগ্রী সরাসরি বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় আসা-যাওয়াই শুধু সহজ করবে না, এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
এর আগে বিএফআরআইয়ের আয়োজনে কুয়াকাটা পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স মিলনায়তনে সীউইড মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মন্ত্রী। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞাপন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, সীউইড বা সামুদ্রিক শৈবাল বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন একটি সমুদ্রসম্পদ। এ সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্বাদু খাবারের যোগান দিতে সীউইড অত্যন্ত সহায়ক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সীউইডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সীউইড পণ্যের প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তারা উপলব্ধি করে।
কুয়াকাটাকে সীউইড প্রাপ্তির একটি বড় অঞ্চল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের পর্যটন হোটেলসহ অন্যান্য হোটেল-মোটেল সংশ্লিষ্টদের সীউইডের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সীউইডের আহরণ ও বিপণনে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এর আহরণ, চাষ পদ্ধতি ও গুণাবলী সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, সুনীল অর্থনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় সম্পদ সীউইড। খাদ্য, ওষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে সীউইডের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে হবে। বিদেশে সীউইড রফতানির বড় বাজার রয়েছে, সেটা আমরা ধরতে চাই। সীউইড জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ দিন মেলার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রগামী প্রতিটি নৌযানের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রগামী সব মাছ ধরার নৌযানে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন হচ্ছে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে মাছ ধরা নৌযানের অবস্থান জানা যাবে। ফলে অবৈধ উপায়ে এবং যত্রতত্র মাছ ধরার ট্রলারের যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
বৈধ উপায়ে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা দুর্ঘটনায় পড়লে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রে অবৈধ উপায়ে মৎস্য আহরণে যাওয়াকে সরকার নিরুৎসাহিত করছে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সমুদ্র থেকে টুনা জাতীয় মাছ আহরণে মৎস্য অধিদফতর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বের অন্তত ৯০টি দেশে বাংলাদেশের মাছের চাহিদা রয়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেটজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে।
বিশ্বের অনেক দেশে মাছ পাঠানো যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখান থেকে প্যাকেটজাত করে সরাসরি মাছ রফতানি করতে পারলে মৎস্য সংশ্লিষ্ট শিল্পেই দক্ষিণাঞ্চল এগিয়ে যাবে, এ অঞ্চলের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ ও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এতে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন অনুষ্ঠানে সীউইড নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন বিএফআরআইয়ের বাংলাদেশ উপকূলে সীউইড চাষ ও সীউইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক মো. মহিদুল ইসলাম।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ওবায়দুর রহমান ছাড়াও কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান, বিএফআরআই ও মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তাগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও মৎস্য খাতের অংশীজনরা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডিএইচডি/আইএইচ
