পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে গেল ১৯ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছে দুই লাখেরও বেশি যানবাহন। এসময় সেতুতে যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ২২ কোটি টাকার বেশি। সবশেষ মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে ৩২ হাজার ২৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যা থেকে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫০ টাকা। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্ত থেকে ঢাকায় ঢুকেছে ১৯ হাজার ৪৩১টি যানবাহন।
পদ্মা সেতু সাইট এরিয়া অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এবার ঈদে দক্ষিণবঙ্গগামী ২১ জেলার মানুষ পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রথম দিকে মোটরসাইকেল বন্ধ থাকলেও ২০ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে তা খুলে দেওয়ায় সেতুতে বেড়েছে টোল আদায়ের পরিমাণ।
পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখো যানবাহনের বাড়তি চাপও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সুষ্ঠু টোল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারায় টোল প্লাজায় এবার কোনো ধরনের যানবাহনের ধীরগতি কিংবা যানজট দেখা যায়নি।
আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সবশেষ ঢাকামুখী যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি ছিল। ফলে চাপ সামলাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি টোল বুথ থেকে টোল আদায় করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পরে চাপ কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একটি টোল বুথ থেকেই মোটরসাইকেল চালকরা টোল দিয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতু পার হন। দ্রুত টোল পরিশোধে বুথগুলোতে কোনো ত্রুটি ছিল না এবার।
এবারের ঈদের আগের দিন এ বছরের রেকর্ড পরিমাণ তিন কোটি ৯১ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে। তবে গেল বছর পদ্মা সেতু চালুর পর পবিত্র ঈদুল আজহার আগের দিন গত বছরের ৮ জুলাই ৩১ হাজার ৭২৩টি যান পারাপারে রেকর্ড পরিমাণ টোল চার কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা আদায় হয়।
আর সবচেয়ে বেশি ৫১ হাজার ৩১৬ যানবাহন পারাপার হয় পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার প্রথম দিন ২৬ জুন। সেদিন মোটরসাইকেলসহ টোল আদায় হয়েছিল দুই কোটি নয় লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ টাকা।
এবারের ঈদ যাত্রার বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে যাত্রীরা জানিয়েছেন স্বস্তির কথা।
ফরিদপুর থেকে আসা এক বাসযাত্রী আরিফ মিয়া বলেন, দুপুরে বাসা থেকে রওনা দিয়েছি। তিন ঘণ্টার মধ্যে সেতু পার হতে পেরেছি। টোল প্লাজায় কোনো চাপ ছিল না।
মাদারীপুর থেকে ঢাকার কর্মস্থলে ফেরা আরেক যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুর শহর থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করতে সময় লেগেছে মাত্র দেড় ঘণ্টা। এবারের ঈদযাত্রায় সড়কপথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি আমাদের। বলা চলে গরমে স্বস্তি যাত্রা ছিল এবার। বিশেষ করে বিগত বছরগুলোতে ট্রোল প্লাজা এলাকাতে যে ধীরগতি দেখেছি যানবাহনের এবার সেই রকম কোনো ধীরগতি চোখে পড়েনি। এতে টোল দিয়ে স্বস্তিতেই যাতায়াত করা গেছে এবার।
শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী কর্মস্থলে ফেরা আরেক যাত্রী তন্ময় শিকদার বলেন, এবার পদ্মা সেতুর জাতিরা প্রান্ত কোনো যানবাহনের জটলা ছিল না। ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে কোনো ধরনের যানবাহনের জটলা দেখতে পাইনি। ভোগান্তিহীন একটি ঈদযাত্রা পেয়েছি এবার। স্বস্তিতে পরিবারের সাথে ঈদ কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরছি।
আজ বুধবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট সূত্র বলছে, পারাপার হওয়া যানবাহনের মধ্যে মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু পাড়ি দিয়েছে ৯৩ হাজার ৫৭৯টি আর জাজিরা প্রান্ত থেকে পাড়ি দিয়েছে ৬০ হাজার ৬৮৯টি যানবাহন।
এতে ঈদুল ফিতর আর শবে কদর মিলে এবার ঈদে ছুটি ছিল পাঁচ দিন। এ সময় পদ্মা সেতু দিয়ে এক লাখ ৫৪ হাজার ২৮৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে পাঁচ দিনে টোল আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৫৪ লাখ নয় হাজার ৪৫০ টাকা। এরমধ্যে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সবধরনের যানবাহন ছিল।
সেতু বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, এবার মোট পারাপার হওয়া মোটরসাইকেলের মধ্যে মাওয়া থেকে পার হয়েছে ৪৭ হাজার ৭০৯টি এবং জাজিরা থেকে পার হয়েছে ২৯ হাজার ৮২০টি। মোটরসাইকেল পারাপারে ১০০ টাকা হিসাবে প্রথম ছয় দিনে টোল আদায় হয়েছে ৭৭ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা।
প্রতিনিধি/জেবি