বুধবার (২২ জুন) সকাল নয়টা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে মাওয়া লঞ্চঘাটে যাওয়ার রাস্তায় চায়ের দোকানের সামনে বসে রীতিমতো কাঁপছিলেন একজন বৃদ্ধা। পাশে একজন কিছু খাবেন কিনা জানতে চাইলে কাঁপা কণ্ঠে বললেন, বাবা একটু চা খাবো। হাতে চা পেয়ে রুটি দিয়ে বেঞ্চের নিচে বসে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খাচ্ছিলেন আর মুখ নাড়িয়ে নীচু স্বরে চা দেওয়া লোকটার জন্য দোয়া করছিলেন এই বৃদ্ধা।
পরে তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, স্বামী-সন্তানহীন বৃদ্ধার নাম রাহেলা খাতুন। গত ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্মার ওপারের জেলা মাদারীপুরের শিবচর থেকে মাওয়া এসে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালাতেন তিনি। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে লঞ্চঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জীবন কিভাবে চলবে তা নিয়ে পাহাড়সম দুশ্চিন্তা রাহেলা বেগমের মাথায়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ব্রিজ তো ভালো জিনিস। পেট কেমনে চলবে? আগে তো ভিক্ষা কইরা কিছু পাইতাম। ফেরি না চললে ওপারই থাকা লাগবে। মাইনষের বাড়ি বাড়ি চাইয়্যা খামু।’
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার অপেক্ষায় যখন গোটা জাতি তখন মাওয়া ঘাটে ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন পার করা রাহেলার মতো আরও যারা আছেন তাদের দুশ্চিন্তা সামনে কিভাবে চলবেন।
কারণ সেতু চালু হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে লঞ্চ-স্পিডবোটের ঘাট। তেমনটা হলে থাকবে না মানুষের আনাগোনা। ফলে কোনো আয়ও হবে না তাদের।
বিজ্ঞাপন
রাহেলা জানান, ১০ বছর আগে স্বামী মারা যায় তার। কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় পালিত মেয়ের আশ্রয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই মেয়ের ঘরে সদস্য বাড়ায় পেট চালাতে তাদেরই কষ্ট হচ্ছিলো। একপর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন।
গত সাতবছর ধরে শিবচর থেকে ফেরিতে করে মাওয়া আসা যাওয়া করে ভিক্ষা করে দিন চলতো রাহেলা খাতুনের। সামনের দিন নিয়ে অজানা দুশ্চিন্তা ভর করেছে এই বৃদ্ধার মধ্যে।
রাহেলা খাতুন জানান, বাম পায়ে ব্যথার কারণে কোথাও পা ঝুলিয়ে বসতে পারেন না। হাঁটতেও কষ্ট হয়। দিন শেষে যা পান তা দিয়ে ওষুধ কিনে খাওয়া মুশকিল।
জানান, একবছর বয়স্ক ভাতা পেলেও এখন ভাতা পান না। স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যের সঙ্গে এ নিয়েও কথা বলেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত মোবাইল না থাকায় বন্ধ হওয়া ভাতা মিলছে না বলে জানান জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে মরিয়া রাহেলা খাতুন।
বিইউ/এএস