কয়েক মিনিটে পদ্মা পাড়ি তিন ঘণ্টায় ঢাকা। বরিশাল থেকে রাজধানীর সঙ্গে সড়ক পথে যাতায়াত প্রশ্নে এখন এমনটাই ভাবনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করবে পদ্মা সেতু।
তাইতো এই সেতুর উদ্বোধনের দিনক্ষন ঘিরে এখন চলছে প্রতি সেকেন্ডের অপেক্ষা। দক্ষিণের ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি হয়ে ওঠা পদ্মা সেতুকে ঘিরে তাই অপার আনন্দ এখন পুরো বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে।
বিজ্ঞাপন
কেবল স্বপ্নের বাস্তবায়ন নয় পদ্মা সেতুর গল্পটা আরও অনেক বড়। যথাসময়ে ফেরি পার হতে না পেরে চাকরির ইন্টারভিউ মিস কিংবা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রওনা হয়ে ফেরি না পেয়ে ঘাটেই মুমূর্ষ স্বজনের মৃত্যু, এরকম বহু কষ্ট আর যন্ত্রণার অবসান ঘটবে আসছে ২৫ শে জুন।
সড়ক যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তনই কেবল নয় এই একটি সেতু দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন এর সম্ভাবনা তৈরি করার পাশাপাশি কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র তথা পায়রা সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব ও বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ী নেতা এবং বিশিষ্টজনরা।
জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. ইউনূস আলী খান বলেন, এখন আমরা যারা লঞ্চের কেবিনে যাই, তারা চিন্তা করবো ৩ ঘণ্টায় ঢাকা যেতে পারছি। তাহলে আমরা কেন সারারাত লঞ্চে থাকবো। তখন সড়ক পথে যাত্রী বেশি হবে। তাছাড়া পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে রাজধানীর সাথে শুধু কম সময়ের যোগাযোগ স্থাপন হবে না দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য ও বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আখতারুজ্জামান খান বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের বিনিয়োগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে দিয়েছে। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। পদ্মা সেতুকে ঘিরে এ অঞ্চলের মৎস্য, কৃষি, পর্যটন, অকাঠামোসহ সব খাতের প্রসার ঘটবে।
অর্থনীতিবিদ আক্তারুজ্জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য এরই মধ্যে উদ্যোক্তাদের মধ্যে নীরব প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পদ্মা থেকে পায়রা দুপাশে বিনিয়োগের গোল্ডেন লাইন সৃষ্টি হচ্ছে। তার মতে, বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে এক ভাগ প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে। এতে সারাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে শূন্য দশমিক ৬ ভাগ। তবে এক্ষেত্রে এখনই বৃহৎ পরিকল্পনা ও পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। তিনি বলেন, এখন দরকার ফাইভ স্টার হোটেল, আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান, আধুনিক বিমানবন্দর। এসব বাস্তবায়নে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে মাস্টারপ্ল্যান দরকার। পরিবেশ রক্ষায় গড়তে হবে গ্রিন ইকোনমি।
বিজ্ঞাপন
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তা বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, স্বপ্নের পদ্মা ও পায়রা সেতু নির্মাণ হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবন-জীবিকা বদলে যাবে। দক্ষিণাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এই জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করবে পদ্মা সেতু।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়া আর বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হওয়া একই কথা হবে। আমাদের এখন শুধু গ্যাস দরকার হবে। আর বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান এখনও খুলনা নির্ভর। সেগুলোর আঞ্চলিক কার্যালয় সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, পদ্মা সেতুর দুই পারের সংযোগে দক্ষিণের ২১ জেলার আর্থসামাজিক এবং শিক্ষা খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এতে দেশের অন্যসব অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমভাবে এগিয়ে যাবে বরিশালের শিক্ষা খাত।
বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য পানি প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্ণেল অব: জাহিদ ফারুক শামীম গত ৪ জুন শনিবার দুপুরে বরিশাল নগরীর বান্দরোডস্থ শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত আউটার স্টেডিয়ামে বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল র্টুনামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়া মাত্রই আমাদের বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক যাত্রারও সূচনা হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
তিনি দক্ষিণাঞ্চলের অগ্রযাত্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যন্ত গ্রামেও বাণিজ্যিক সুবিধা পৌঁছে দেব ইনশাআল্লাহ। আমরা গ্যাস ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে সব সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রতিনিধি/এএ