নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে রোববার (২৬ জুন) ভোট ছয়টা থেকে। নির্দেশনা রয়েছে, এই সেতু হেঁটে পার হওয়া যাবে না। এমনকি দাঁড়িয়ে ছবিও তোলা যাবে না। তবে উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনে এক্ষেত্রে বেশ ঢিলেঢালা ভাব ছিল সেতু কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের। যে কারণে অনেকেই সেতুতে গাড়ি রেখে ছবি তুলে সময় কাটিয়েছেন। কেউ কেউ হাঁটাহাটিও করেছেন। এদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ময়মনসিংহের এমদাদুল হক। কারণ তিনি পুরো পদ্মা সেতু হেঁটে পার হয়েছেন।
পেশায় রাজমিস্ত্রি এমদাদুল হক যাবেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। রোববার বেলা ১২টার দিকে তার সঙ্গে সেতুর মাওয়া প্রান্তের কাছাকাছি এই প্রতিবেদকের দেখা হয়। কীভাবে সেতু পার হলেন, কেনই বা হেঁটে পার হতে হলো সেসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন মাদারীপুরে শিবচর থেকে আসা এমদাদুল হকের। যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন তীব্র রোদে ঘেমে একাকার অবস্থা তার।
বিজ্ঞাপন
কেন হেঁটে পার হলেন- এমন প্রশ্ন রাখতেই তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটা অসুস্থ। হাসপাতালে আছে। এপারে কাজের জন্য আসছিলাম। কিন্তু মেয়ের কথা শুনে আর থাকতে পারছি না। বউ ছাড়া কেউ নেই ওকে দেখার। তাই সকালে রওয়ানা হওয়ার পর দেখলাম কোনো বাসে নিচ্ছে না। তাই হাঁটা শুরু করলাম। যতক্ষণ লাগে হাঁটতেই থাকবো।’
মেয়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি আছে। বুধবার অপারেশন হবে। আজকে রিপোর্ট দেওয়ার কথা, যা আমাকে নিতে হবে। ফোনে স্ত্রীকে বলে দিছি, রিপোর্টটা উঠিয়ে নাও, আমি হেঁটে আসতেছি। স্ত্রী বললো, এত কষ্ট করতেছ, ব্রিজ দিয়া হাইটা আসতেছ। আমি জানাইছি, কী করুম গাড়ি পাই না। গাড়ি পাইলে দ্রুত যেতে পারতাম।'
এমদাদুল বলেন, ‘সবাই বলছে পদ্মা সেতুর ওখানে গেলেই গাড়ি পাবেন। সেতু পর্যন্ত এসে কোনো গাড়ি পাই নাই। অনেক গাড়িতে উঠতে চাইছি, নেয়নি। পরে হাঁটা শুরু করি। ১০টায় সেতুতে উঠছি।’
বিজ্ঞাপন
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। এই সেতু দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পৃথিবীতে অসংখ্য সেতু রয়েছে। সেই হিসেবে পদ্মা ১২২তম দীর্ঘ সেতু।
দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়।
পদ্মা সেতু হেঁটে পার হওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, যদিও গাড়ি পাই নাই তবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটতে ভালোই লাগছে। উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিন এইজন্য একটু সুযোগ আছে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যে কেউ হাঁটার সুযোগ আর কাউকে দিবে না মনে হয়।
আর কাউকে হেঁটে পার হতে দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মতো আরও কেউ এই সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে গেছে কি না জানি না। আমার সাথে যারা আসছে তারা এখনও আমার পর্যন্ত আসতে পারিনি। সেতুর মাঝখান পর্যন্ত অনেকেই আমার সাথে ছিল তাদের আর দেখিনি। ওপারে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় ছিলাম। আমার যাওয়া খুবই দরকার।
কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আবার ব্রিজের লোকজন দুই জায়গায় থামাইয়া বলছে পিছে চলে যাইতে। একবার পিছে গিয়ে আবার সামনে চইলা আসছি। কারণ আমার তো যাওয়া লাগবেই যেভাবে হোক। পরে আর কেউ কোনো সমস্যা করে নাই।’
ডব্লিউএইচ/বিইউ/জেবি