শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পেশাজীবীদের চোখে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২২, ০১:১১ এএম

শেয়ার করুন:

পেশাজীবীদের চোখে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বন্ধ করলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের টাকায় নির্মিত হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় এই সেতুর নির্মাণ শেষ করায় ইতোমধ্যে বিশ্ববাসীকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ উচ্ছ্বসিত এই সেতু নিয়ে। 

যদিও কানাডার আদালতের রায় অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি।  


বিজ্ঞাপন


কেউ বলছেন, এই সেতু বড় বড় দাতা সংস্থাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সক্ষমতা। কেউ মনে করছেন, এই সেতু ইতিহাস শুধুমাত্র ইট পাথরে নির্মিত নয়, বরং কোটি কোটি মানুষের আবেগ ও অনুভুতির মিশ্রণ ঘটেছে পদ্মা সেতুতে।

শনিবার (২৫ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টার পর সেতু উদ্বোধন করবেন।

এমন মাহেন্দ্রক্ষণের আগ মুহুর্তে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে নিজেদের অনুভূতির কথা জানতে চাওয়া হয়। নিজেদের মূল্যায়নের পাশাপাশি আগামী দিনে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এই সেতুর ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছেন। 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু তালেব পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের অনুভূতি ও মূল্যায়ন তুলে ধরে ঢাকা মেইলকে বলেন, পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে  সারাদেশের বন্ধনই সৃষ্টি করেনি, এটি বাংলাদেশের গর্বের একটি প্রতীক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে বিশ্বের ৯০তম দেশ হলেও বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুটি দৈর্ঘ্যে ১১তম। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এ সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী উদ্যোগ। সেতুটি উদ্বোধন হলে অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।

অন্যদিকে পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের ভাষ্য, যে অনিয়মের কথা বলেছিলো বিশ্বব্যাংক তার কিছুই এখানে পাওয়া যায়নি।  ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। 

এই সাংবাদিক নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, রিপোর্টার হিসেবে আমি কূটনৈতিক রিপোর্ট কভার করি, তাই আমার কাছে মনে হয়েছে পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রীর সৎ এবং দৃঢ় নেতৃত্বের ফসল। কারণ এতবড় প্রকল্পে যদি সামান্যতম দুর্নীতিও থাকতো , তাহলে বিশ্বব্যাংক তথা পশ্চিমা বিশ্ব ছেড়ে কথা বলতো না।  

তিনি আরো বলেন, অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের বিপরীতে গিয়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করাও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রায় অসম্ভম। বাংলাদেশ সেটা করে দেখিয়েছে। এটা বড় ব্যাপার। পদ্মা সেতু শুধু দেশে না, গোটা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থাতে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে বলে মনে করেন এই সাংবাদিক নেতা। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম মনে করেন, পদ্মা সেতু আমাদের বাংলাদেশের এক নব অহংবোধের নাম। 

ঢাকা মেইলকে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলার সমগ্র বিশ্বকে জানান দিচ্ছে এক দুর্নিবার বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্পের। এর প্রতিটি স্প্যান বিশ্বকে এবং একইসঙ্গে যারা পদ্মা সেতুর বিনির্মাণে প্রতিবন্ধক ছিলেন তাদের এই বার্তা দিচ্ছে যে, বাংলাদেশ রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজের জাত চেনাতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, এক পদ্মা সেতু বহু মানুষের বহু প্রশ্নের জবাব। তাই প্রমত্তা পদ্মার উপর নির্মিত পদ্মা সেতু, আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বেসরকারি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইও) মো. আসাদুল্লাহিল গালিবের ভাষ্য, বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বিস্ময়' গানের এই পক্তিমালা এখন আর মনের আকাঙ্ক্ষা বা ব্যকুলতা নয়, বাস্তবে দৃশ্যমান। পদ্মাসেতুর মতো বড় ও নির্মাণশৈলীর সেতু বিশ্বে হয়তো আরো আছে, কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং এরপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে।  

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা আর্থিক সূচক ও অভিজ্ঞতার আলোকে মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। সুতরাং বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন দিবাস্বপ্নের মতো ছিল। সেই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে বলেই সারা বিশ্বের নজরে আজ বাংলাদেশ।

মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি এই সেতুর অন্যান্য ভূমিকা রাখার কথা তুলে ধরে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এই সেতু শুধু দুর্ভোগ লাঘব কিংবা ২১ জেলার মধ্যে সংযোগ বা আর্থিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ির আর্থিক সক্ষমতার মূর্তপ্রতীক। আশা করবো, দক্ষিণ-পশ্চিমের জনগোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই চ্যালেঞ্জকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। কেননা তার জিদ এবং সাহসের সফল আজকের পদ্মাসেতু।

পদ্মা সেতুকে নিয়ে নিজের মূল্যায়ণ তুলে ধরতে গিয়ে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী ঢাকা মেইলকে বলেন,  ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ার, লন্ডনের ঝুলন্ত ব্রিজ, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টাওয়ারের মতো  ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু বাংলার আইকনিক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি পদ্মা সেতু বাংলার অপরাজেয় মনোভঙ্গি ও সক্ষমতার দারুণ এক দৃষ্টান্ত। 

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন আটকানো যায় না, যোগ্য নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা প্রমাণ করেছেন। এই সেতু প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় ‘শেখ হাসিনা সেতু’ নামে নামকরণ না হলেও পদ্মা-সেতুর সঙ্গে শেখ হাসিনার সাহসের গল্প সারা বিশ্বে মিথ হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ‘সাবাস বাংলাদেশ,  এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়!’

বিইউ/এমএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর