গত জুন মাসে চালু হওয়া পদ্মা সেতুতে নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন চলাচলের সুযোগ শেষ হয়ে আসছে। জানুয়ারি মাস থেকে ২৭ টনের বেশি ওজনের কোনো বাহন এই সেতুতে ওঠার সুযোগ পাবে না। ফলে নতুন বছর পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক চলাচলসহ সার্বিক বিষয়ে অনেকটা শৃঙ্খলা ফেরার আশা করা হচ্ছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণে ৬৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়েস্কেল বসানোর কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে এই কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, কোনো যানবাহনে বেশি ওজনের মালামাল থাকলে রেড জোন দিয়ে যেতে হবে স্টকইয়ার্ডে। তারপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে হবে বাড়তি ওজনের পণ্য। পরে সেতু দিয়ে চলার সুযোগ মিলবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়েস্কেলের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণও শেষের পথে। আসছে জানুয়ারি থেকেই এই পদ্ধতি চালুর আশা কর্তৃপক্ষের।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ওয়েস্কেল বসানোর কাজ শেষ দিকে। আশা করি এই মাসের মধ্যে কাজ পুরোপুরি শেষ করা যাবে। পুরোপুরি মনিটরিং শেষে আগামী জানুয়ারিতে চালু হবে এটি।’
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তেই ইলেকট্রিক সেন্সর নিয়ন্ত্রিত ওজন পরিমাপের ওয়েস্কেল বসানোর কারণে ডিজিটাল এই পদ্ধতিতে কোনো পরিবহনকে দাঁড়াতে হবে না। চলার পথেই চলতি হবে ওজন পরিমাপ।
বিজ্ঞাপন
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হয়। এটি দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করছে। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন জেলার পণ্যবাহী গাড়ি পদ্মা সেতু পারাপার হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছে। তবে সেতুতে নিয়ন্ত্রণহীন নির্ধারিত ২৭ টনের বিধিনিষেধ মানে না অনেকেই।
সেতু সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুর টোল দেওয়ার জন্য ছয়টি লেন রয়েছে। যার দুটি দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ির জন্য। সামনে থেকে টোল প্লাজায় প্রবেশ করার আগে পণ্যবাহী গাড়িগুলো ওয়েস্কেলে যাবে। গাড়ির ওজন করার পর ২৭ টনের কম হলে সেগুলো টোল প্লাজার পাশে সবুজ জোনে যাবে। এরপর তা টোল দিয়ে টোল প্লাজা অতিক্রম করে সেতুতে উঠবে।
আর যে গাড়ির ওজন বেশি হবে, তা রেড জোনে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই গাড়িগুলো টোল প্লাজার পেছনে স্টকইয়ার্ডে গিয়ে পণ্য নামিয়ে রেখে আবার ওয়ে স্কেলে আসতে পারবে। এজন্য রাস্তা ও স্টকইয়ার্ড নির্মাণও শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে টোল প্লাজার সামনে তিনটি আলাদা লেনে বসানো হয়েছে ডিজিটাল ওয়েস্কেল। ইলেকট্রিক সেন্সর নিয়ন্ত্রিত লেনের নির্মাণ শেষে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
এছাড়া যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক মোশন ক্যামেরা। সিগন্যাল বাতি, ডিজিটাল ডিসপ্লে, ডিভাইডার সাইন বসানোর কাজও শেষ।
কিছু ট্রাকের ওজন এখন মাপা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে স্পিডগান দিয়ে গাড়ির গতিও দেখা হচ্ছে। বেশি গতি পাওয়া গেলে মামলার মুখেও পড়তে হচ্ছে গাড়ির চালকদের।
পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা বলছেন, রড, সিমেন্টসহ ভারী অনেক পণ্য আছে যেগুলো বড় ট্রাকে করে আনা-নেওয়ার করার সময় ওজন ৪০ টন পর্যন্ত হয়। কিন্তু এতদিন পদ্মা সেতুতে ওজন না করার সুযোগে যে যার মতো চলাচল করেছে। এই যন্ত্র পুরোপুরি চালু হলে নিয়ম মেনে ট্রাক বোঝাই করতে হবে। না হলে মালামাল আবার নামাতে হলে আর্থিকভাবে ক্ষতি হবে কোম্পানির।
সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, আমরা আশা করি ওয়েস্কেল পুরোপুরি চালু হলে তা সেতু এবং দুই পাশের সড়কের জন্যও বেশ উপকারে আসবে। কারণ অনেকেই হয়তো অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করা থেকে বিরত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এই সেতুতে।
চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের জিডিপি বছরে ১.২ থেকে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
বিইউ/জেবি