মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

‘ঈদে আয় ভালো হয়নি তাই বাড়িও যাইনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ঈদের এক সপ্তাহ আগে ও পরে ভালোই ভাড়া হত। গত বছর এসব দিনগুলোতে ১৫শ’ থেকে ২ হাজারের কাছাকাছি ভাড়া হয়েছে। কিন্তু এবার হাজারের কম। যেমন আশা করেছিলাম তেমন হয়নি। তাই আর বাড়ি যাইনি। ঈদ করার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছি। আর ঢাকায় নিজের মতো করে হালকা খাবার খেয়ে আবার রাস্তায় নেমেছি। এই কথাগুলো বলছিলেন মিরপুর-১১ মেট্রো স্টেশনে বসে থাকা রিকশা চালক রফিক মিয়া। তিনি পূরবী এলাকার বস্তিতে থাকেন। ঈদের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।

রফিক মিয়ার অভিযোগ, রাস্তায় প্রচুর রিকশা বেড়েছে। তার সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা আরও বেশি বেড়েছে। ফলে মানুষ দ্রুত যাওয়ার জন্য বেশিরভাগ সময় ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠেন। এছাড়া ইঞ্জিনের এসব রিকশায় তারা অল্প টাকায় বেশি পথ যেতে পারেন। ফলে আমাদের মতো পায়ে চালিত রিকশার চাহিদা কমে গেছে।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, বাড়িতে মা, স্ত্রীসহ দুই সন্তান আছে। সবার জন্য নতুন কাপড় কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। আবার ভাবি নিজেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো শুরু করবো কিনা? অনেক সময় বলা হয় এসব রিকশা রাস্তায় উঠতে দেওয়া হবে না। এটা নিয়েও ভয় লাগে। তবে আয় রোজগারের যে অবস্থা কি করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।

রফিক ঈদে আয়ের ব্যাপারে বলেন, ২০ রোজার পর থেকে আজ পর্যন্ত ১২ দিনে আয় হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার টাকা। গত ঈদে এই সময়ে ২০ হাজার টাকার বেশি ভাড়া হয়েছিল।

এমন আয় শুধু রফিকের নয়। পায়ে চালিত সকল রিকশা চালকের অবস্থা একই। চরম দুর্দশায় এবারের ঈদ কেটেছে তাদের। সবার চাওয়া ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাপারে একটা কার্যকরী সিদ্ধান্ত জানানো। 

পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন আজাদ হোসেন। তিনি বলেন, গত ৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। কিন্তু এবারের মতো কম ভাড়া আগের কোনো বছরই হয়নি। তাই এবারের ঈদ খুব ভালো কাটেনি।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, আমরা যারা পায়ে চালিত রিকশা চালাই তারা নিজেরা শতভাগ পরিশ্রম করে রিকশা টানি। কিন্তু ব্যাটারি চালিত রিকশায় এত শ্রম লাগে না। ইঞ্জিনের রিকশায় বেশি সময় ও বেশি দূরত্বে ভাড়া মারা যায়। আমরা তাদের মতো গতিতেও যেতে পারি না। তাই বেশিরভাগ মানুষ ব্যাটারি চালিত রিকশায় উঠতে পছন্দ করেন। তবে আসলেই কোন রিকশা রাস্তায় চলতে পারবে সেটার সিদ্ধান্ত জানতে চাই আমরা। 

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অল্প টাকায় দ্রুত গন্তব্যের দিকে যাওয়া যায়; তাই ব্যাটারিচালিত রিকশা তাদের পছন্দ। এই ধরনের রিকশায় ভাড়া কম, বসার জায়গা বেশি ও দ্রুত গতির কারণে এটার যাত্রীও বেশি। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা কিছুটা বেপরোয়া। তাদের দ্রুত গতির কারণে অনেক সময় বিভিন্ন ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।

নাজমুল হোসেন নামের একজন যাত্রী বলেন, পায়ের রিকশার ভাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশার চেয়ে বেশি হয়। আর ঢাকার রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে দ্রুত যাওয়ার জন্য ইঞ্জিনের রিকশাই ভালো। ফলে এই ধরনের রিকশায় বেশি ওঠা হয়। তবে ঢাকায় দুই ধরনের রিকশা চলাচল নিয়ে যে দ্বন্দ্ব আছে সেটার নিরসন হওয়া উচিত। 

ঐশী নামের একজন যাত্রী বলেন, আমার পছন্দ পায়ের রিকশাই। কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। তারা যে গতিতে রিকশা চালায় তাতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কিছুটা ভাড়া বেশি হলেও পায়ের রিকশায় উঠি।

এএসএল/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন