বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

দূষণের শহরে মিলবে স্বস্তি

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

দূষণের শহরে মিলবে স্বস্তি

রাজধানী ঢাকার প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি শব্দ ও বায়ু দূষণ। দূষিত নগরীর তালিকায় প্রায়ই শীর্ষ অবস্থানে থাকে ঢাকা। আর এই বায়ু ও শব্দ দূষণের মূল উৎস যানবাহন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল চালু হলে কমবে বায়ু ও শব্দ দূষণ। অনেকটাই স্বস্তি মিলবে রাজধানীর মানুষের।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র বলছে, এমআরটি-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল শুরুতে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। তবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোটা চালু হলে এই মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ৬টি কোচ সম্বলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেল প্রতিবারে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে সর্বোচ্চ ২,৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হবে না। ফলে বায়ু দূষণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।


বিজ্ঞাপন


মেট্রোরেল অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করবে। ফলে ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস পেয়ে জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার কমবে। এতে বায়ু দূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমবে। মেট্রোরেলের ট্র্যাকের নিচে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম থাকবে। মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের উভয় পার্শ্বে শব্দ প্রতিবন্ধক দেয়াল থাকবে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণমাত্রা অনেক কম থাকবে। সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বরং পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

এ বিষয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেলের প্যাসেঞ্জাররা অন্য ট্রান্সপোর্ট বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে না। ফলে ওই এলাকায় ওই সময়টাতে ট্রাফিক লোড কম থাকবে। ট্রাফিক লোড কম থাকলে যানজট কম থাকবে। ফসিল ফুয়েল ব্যবহারও কমে আসবে। ফসিল ফুয়েল ব্যবহার কমে আসলে বায়ু দূষণ কমে আসবে। কার্বন নিঃসরণ কম হবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধকল্পে এটা একটা ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও যানজট যখন কমে যাবে তখন বায়ু দূষণের সাথে সাথে শব্দ দূষণও কমে যাবে। তেমনি কার্বন নির্গমনও কমবে। যদি কপ্লিট মেট্রোরেলে আমরা যেতে পারি তাহলে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সেটি অনেকাংশে কমে আসবে। মেট্রোরেলের যে ১৭টা লোকেশন আছে সেই ১৭টা লোকেশনে আমরা মেট্রোরেলের নয়েজ কোয়ালিটি ও এয়ার কোয়ালিটি মনিটর করে আসছি। আমরা আশা করছি মেট্রোরেল চালু হলে শব্দ ও বায়ু দূষণ যৌক্তিক অংশে কমে আসবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ট্রান্সপোর্ট প্লানিং ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিবহন পরিকল্পনায় বলা হয় যে গণপরিবহন সবসময় দূষণ কমিয়ে দেয়। কিভাবে কমিয়ে দেয়- একই সাথে কয়েক হাজার মানুষকে একসাথে পরিবহন করে। অনেকগুলো ছোট গাড়ি বা অন্য গাড়িতে যেসব মানুষ যাতায়াত করত তারা বিকল্প হিসেবে মেট্রোরেল ব্যবহার করবে। সুতরাং এটি অবশ্যই দূষণ কমিয়ে আনবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, যেহেতু গাড়ির সংখ্যা কমে যায় সে কারণে এটাকে সব দিক থেকেই পরিবেশবান্ধব হিসেবে ধরা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মিজানুর রহমান জানান, মেট্রোরেলের লাইনের নিচে এমএসএস (ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম) থাকবে। ম্যাস স্প্রিং সিস্টেমে বিশেষ ধরনের বিয়ারিং থাকে, যার কাজ হলো রেললাইনে যে কম্পন তৈরি হয় তা শোষণ করা। এর ফলে ট্রেন চলাচলের সময় আশপাশে তেমন একটা কম্পন অনুভূত হবে না। মেট্রোরেল প্রকল্পটিতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণেরও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ভিভিভিএফ (ভেরিয়েবল ভোল্টেজ ভেরিয়েবল ফ্রিকোয়েন্সি) ইনভার্টার সিস্টেমে ট্রেন চলার সময় অনেক কম শব্দ তৈরি করে, যা শব্দদূষণের পর্যায়ে পড়ে না। মেট্রোরেল প্রকল্পটি চালু হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাস ব্যবহারকারী অনেক যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করবে। এর ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ অনেক কমবে। এছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পটি চালু হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাস ব্যবহারকারী অনেক যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করবে। বাসের ক্ষেত্রে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ৫১ গ্রাম, ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ১৬৮ গ্রাম। অন্যদিকে মেট্রোরেল যেহেতু বিদ্যুৎচালিত, তাই কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ নেই বললেই চলে। এসব বিবেচনায় মেট্রোরেল অন্য পরিবহন ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব।


বিজ্ঞাপন


এদিকে মেট্রোরেলের নিচের অংশে করা হচ্ছে সবুজায়ন। মেট্রোরেলের নিচের আইল্যান্ডে লাগানো হচ্ছে বাহারি ফুলের গাছ। যা প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরও বিকশিত করবে। ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। দুই সড়কের মাঝে আইল্যান্ড তৈরি করা স্টিলের ব্যারিয়ার দেওয়া হচ্ছে। যেখানে কেউ সহজে প্রবেশ করতে পারবে না।

জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর