একদিন বাদেই রাজধানীর বুকে ছুটবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। শুরুতে অল্প যাত্রী নিয়ে উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করলেও শিগগিরিই মতিঝিল পর্যন্ত পুরো রুটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা আছে। তবে বৃহৎ এই প্রকল্পের স্টেশন ছাড়াও মেট্রোরেলের ভেতরে নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মোবাইল অপারেটরগুলো।
এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইতোমধ্যেই এমআরটি লাইন-৬ এর মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা চালু করতে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে স্টেশনগুলো কেন্দ্রিক নিজেদের খসড়া পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে অ্যামটব।
বিজ্ঞাপন
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) এই চিঠি দেয় অ্যামটব। যার কপি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেও (বিটিআরসি) দেওয়া হয়েছে। তবে নকশায় নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার জন্য কোনো ধরণের সরঞ্জাম বসানোর সুযোগ না থাকায় আপাতত এ বিষয় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ডিএমটিসিএল জানিয়েছে- আপাতত তাদের মেট্রোরেল বা স্টেশনে ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়ারও কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অন্যান্য স্টেশন যেগুলো প্রস্তুতির পর্যায়ে সেগুলোয় নেটওয়ার্ক শক্তিশালী রাখার ক্ষেত্রে অ্যামটব যে পরিকল্পনা দিয়েছে, সে বিষয়ে সুযোগ রাখার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
অ্যামটবের আশঙ্কা- পুরোদমে কার্যক্রম শুরুর পর মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করবে। সে হিসেবে দিনে মেট্রোরেলে চলাচল করবে ৪ লাখ যাত্রী। যে কারণে স্টেশনগুলোতে মানুষের চাপ বাড়বে। পাশাপাশি মেট্রোরেলেও অনেক চাপ হবে। ফলে মেট্রোরেল স্টেশনে ছাড়াও ট্রেন চলা অবস্থায় কলড্রপ হতে পারে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মোবাইল অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে মেট্রোরেল স্টেশন ও ট্রেনে নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বসানোর বিষয়ে এই চিঠি দেওয়া হয়।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে অ্যামটব। এ কারণে মোবাইল অপারেটররা সমন্বিত নেটওয়ার্ক সুবিধা স্থাপন করতে চান। এ নিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রস্তুত থাকা ৯টি স্টেশনে প্রযুক্তিগত জরিপ ও মূল্যায়ন করেছে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও করেছে।
এ বিষয়ে অ্যামটবের মহাসচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ জানিয়েছেন, মেট্রোরেলে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে অপারেটররা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছেন- সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।
বিজ্ঞাপন
যদিও ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনকার নকশা ও অবকাঠামোতে এই সুযোগ নেই। অপারেটরগুলো যেন আশপাশে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাড়ায়। যাতে মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের আওতায় থাকে। তবে মেট্রোরেলের পরবর্তী লাইনগুলোতে এই ব্যবস্থা থাকবে। মেট্রোরেলের বিদ্যমান নকশা ও অবকাঠামোতে মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার ও তার বসানোর উপায় নেই বলেও জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক।
ডিএমটিসিএলের এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলোকে আশপাশের ভবনে অথবা খালি জায়গায় নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। মেট্রোরেলের (লাইন-৬) মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ এবং নতুন যেসব লাইন হবে, সেগুলোতে এই ব্যবস্থা রাখতে হলে এখন থেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে।
যদিও আশপাশের ভবনে টাওয়ার বসানো কঠিন হবে বলে দাবি করেছে অ্যামটব। অবশ্য, এ ক্ষেত্রে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নাগালের মধ্যে কিছু হলে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বিইউ/আইএইচ