দেশের দ্বিতীয় মেট্রোরেল তথা প্রথম পাতাল মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-১) দুটি রুটে বিভক্ত। এরমধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুট হবে পাতাল এবং পূর্বাচল রুট হবে উড়াল। মোট ২১টি স্টেশনের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুটে ১২টি এবং পূর্বাচল রুটে ৯টি।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৭টি স্টেশনবিশিষ্ট উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) নির্মাণের অভিজ্ঞতা সংযুক্ত করা হচ্ছে পরবর্তী এই মেট্রোরেল নির্মাণের ক্ষেত্রে। এমআরটি-৬ নির্মাণের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যেসব এলাকা ইতিমধ্যে নগরীতে পরিণত হয়েছে এবং ট্রাফিক ঘনত্ব বেশি সেসব এলাকায় উড়াল মেট্রোরেল সড়কের মাঝ (মিডিয়ান) বরাবর নির্মাণকালে জনদুর্ভোগ বেশি হয়। পক্ষান্তরে, নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ট্রাফিক ঘনত্ব ও জনবসতি কম হওয়ায় উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণকালে জনদুর্ভোগ নেই বললেই চলে। এ প্রেক্ষাপটে বিমানবন্দর রুট পাতাল এবং পূর্বাচল রুট উড়াল হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভূঁঞা ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সাথে সমন্বয় করেই কাজ হচ্ছে। ফলে এলাকাভিত্তিক আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
আবুল কাসেম ভূঁঞা আরও বলেন, প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা কাজ করছি। ট্রাফিক ঘনত্ব বেশি যেসব এলাকায় সেখানে সড়কের মাঝ বরাবর উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণকালে জনদুর্ভোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। তাই সেসব এলাকায় পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে।
তবে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগরায়ণ ও উন্নয়নের যে পদ্ধতি আমাদের দেশ অনুসরণ করছে তা কতটা ঠিক দেখার সময় এসেছে। যদি উন্নয়নের এ পদ্ধতি ঠিক থাকত দূষণের মাত্রা এতটা খারাপ হতো না। দেখা যায় নীতিমালা ছাড়াই একদিকে ভবন নির্মাণ বেড়েছে সেই সাথে অবকাঠামো প্রকল্প বেড়েছে। রাস্তায় বারংবার খোঁড়াখুঁড়ি বেড়েছে।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মেট্রোর মতো অবকাঠামো বা নিজেদের উন্নয়নের জন্য প্রায়ই সড়ক খনন করা হয়। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, সেখানে নীতিমালা মানা হয় না।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের (এমআরটি-১) ২১টি স্টেশনের মধ্যে পূর্বাচল রুটে থাকছে ৯টি স্টেশন- নতুন বাজার, নদ্দা, জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেষ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল।
অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটে থাকছে ১২টি স্টেশন- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩, খিলক্ষেত, নদ্দা, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ, কমলাপুর।
নির্মাণ শেষ হলে ২০২৬ সালে এই মেট্রোরেলে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেলে প্রতিবার ১২টি স্টেশনে থেমে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত, ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিটে ৩০ সেকেন্ডে নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত এবং ১৬টি স্টেশনে থেমে ৩৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে কমলাপুর থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত যাতায়াত করবে।
অন্যদিকে, এমআরটি-১ এর পাতাল অংশে সর্বোচ্চ পরিচালন গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। উড়াল অংশে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি থাকবে ১০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ উড়াল মেট্রোরেলের চেয়ে পাতাল রেলের গতি কম থাকবে।
ডিএইচডি/জেএম