দেশের প্রথম পাতাল রেলের (এমআরটি লাইন-১) উড়াল ও পাতাল পথ নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। দেশের প্রথম হওয়ায় এই পাতাল রেল নিয়ে জনসাধারণের আগ্রহের কমতি নেই। এই মেট্রোরেলের পাতাল অংশের টানেল নির্মাণ করা হবে মাটির ১০ মিটার গভীরে। এখন প্রশ্ন উঠেছে- কতটা ভূমিকম্প-সহনশীল হবে এই পাতাল রেল? সেই সাথে নির্মাণকালে সুড়ঙ্গ তৈরির সময় যে কম্পন সৃষ্টি হবে তা আশপাশের বাসাবাড়ির ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন বিশাল কর্মযজ্ঞের সময় কিছুটা বিড়ম্বনা এড়ানো কেবল আমাদের দেশে নয়, উন্নত দেশগুলোতেও সম্ভব নয়। তবে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেই বিড়ম্বনা সাময়িক এবং মাত্রাও খুবই সামান্য। জনগণ প্রকল্প শেষে যে সুবিধা ভোগ করবেন, সেই তুলনায় বিড়ম্বনা বড় কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়।
বিজ্ঞাপন
কর্তৃপক্ষের দাবি, যে কোনো মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের প্রথম পাতাল রেলের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ পাতাল অংশের টানেল মাটির অনেক গভীরে চারদিকের মাটি দ্বারা আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ থাকে। তাই ভূমিকম্পের সময় টানেল ও আশপাশের মাটি একই ছন্দে নড়ে। এতে টানেলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না এবং পাতাল রেলপথের কোনো ক্ষতি হবে না।
নির্মাণকালের ঝুঁকি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভূঁঞা ঢাকা মেইলকে বলেন, টানেলের খনন কাজ করা হয় টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দ্বারা। ঢাকার মাটির গুণাগুণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আর্থ প্রেসার ব্যালেন্সড (ইপিবি) টাইপ ‘টিবিএম’ ব্যবহার করা হবে। এই ধরনের ‘টিবিএম’র সুবিধা হলো- মাটির ওই স্তরের বিদ্যমান চাপের সমান ও বিপরীতমুখী চাপ প্রয়োগ করে খনন করা হয়। ফলে খননের সময় নির্মিয়মান সুড়ঙ্গের আশপাশের মাটিতে নতুন করে কোনো চাপ সৃষ্টি হয় না।
পাতাল ট্রেনের সুড়ঙ্গ তৈরির কারণে রাস্তার দুপাশের ভবনগুলোর কোনো ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে আবুল কাসেম ভূঁঞা বলেন, টানেল নির্মাণে আশপাশের ভবনের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। সেভাবেই টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ডিজাইন করা হয়েছে। ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর (গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল) অনেক গভীরে থাকায় ঢাকার মাটি টানেল নির্মাণের উপযোগী।
সুড়ঙ্গ নির্মাণকালে দেবে যাওয়া বা কোনো প্রকার চ্যালেঞ্জ সামনে আসলে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে জানতে চাইলে আবুল কাসেম ভূঁঞা বলেন, টিবিএমের মাধ্যমে খনন করা মাটির নমুনা সংগ্রহ করে অনবরত পরীক্ষা করা হবে এবং সেই মোতাবেক খনন কাজ সমন্বয় করা হবে। যে পথে খনন কাজে এগিয়ে যাবে তার দুপাশের ভবনগুলোর নিচের দিকে সেন্সর লাগানো হবে। কোথাও মাটির স্তর দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে ভবনে লাগানো সেন্সরগুলো সিগন্যাল দিয়ে তা আগাম জানিয়ে দেবে।
বিজ্ঞাপন
সর্বোচ্চ কত মাত্রার ভূমিকম্পে পাতাল রেল টিকে থাকবে এবং এ নিয়ে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব মাত্রার ভূমিকম্পেই পাতাল রেল টিকে থাকতে পারবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
যদিও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা মেইলকে বলেন, পৃথিবীর নানান দেশের বড় বড় শহরগুলোতে অনেক বছর আগে দ্রুতগতিসম্পন্ন পাতাল রেল নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে শহরবাসীকে নির্বিঘ্নে সেবা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকার পাতাল রেল ডিজাইন করা হয়েছে।
পাতাল রেল কতটা ভূমিকম্প-সহনশীল হবে জানতে চাইলে এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ঝুঁকি তো কিছুটা থাকে। নির্মাণ শেষে নাগরিকরাই এর উপকারভোগী হবেন। ভূমিকম্পে বা অন্য কোনো কারণে যদি নিচের মাটি সরে যায় তাহলেই পাতাল রেল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নয়তো তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
উল্লেখ্য, অতি ঘনবসতিপূর্ণ এবং নিত্যদিনের অসহনীয় যানজটকবলিত ঢাকা শহরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বার্থে পাতাল রেল নির্মাণ পরিকল্পনা নেয় সরকার। এমআরটি লাইন-১ এর রুট এলাইনমেন্ট ২০১৫ সালে প্রণীত আরএসটিপিতে (রিভাইজড স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান) প্রস্তাব করা হয় এবং সেই মোতাবেক সম্ভাব্যতা যাচাই ২০১৭-১৮ সালে সম্পন্ন হয়। জাইকার সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও রীতিনীতি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগিতার বিষয় বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল ও পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়।
দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি-১ এর নির্মাণকাজ গত ২ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দর-কমলাপুর এবং পূর্বাচল-নতুন বাজার-রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ রুটের মধ্যে ৩১.২৪১ কিলোমিটার বিশিষ্ট পাতাল ও উড়াল এই মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-১) নির্মাণ করা হবে।
ডিএইচডি/জেএম

















































































































































































































