জাহিদ হোসেন চুন্নু। থাকেন মিরপুর-১১ নম্বর এলাকায়। মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে গত কয়েক বছর থেকেই নানা কাজে যাতায়াতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে। তবে স্বপ্নের মেট্রোরেল চালুর পর অবশেষে জাহিদের সেই ভোগান্তির অবসান হয়েছে। শুধু তাই নয়, মেট্রোরেল চড়ে অতীতের সব কষ্ট ভুলে নতুন স্বপ্ন দেখছেন তিনি। জীবনযাত্রার নতুন পরিকল্পনাও করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মেট্রোরেলের দুয়ার। এ দিন স্বপ্নের মেট্রোভ্রমণে আসেন জাহিদ।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে জাহিদ বলেন, মিরপুরে যখন মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয় তখন আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বছরের পর বছর রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। নির্মাণকাজ চলার সময় রাস্তার কোথাও সংকুচিত আবার কোথাও একেবারে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। বর্ষাকালে হাঁটু সমান কাদা-পানিতে পরিস্থিতি হয়ে উঠতো আরও ভয়াবহ। রাস্তার দুই পাশের আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের চিত্র। কিন্তু মেট্রোরেল চালুর পর এখন ওইসব ভোগান্তি মিরপুরবাসী ভুলে গেছে।
এ সময় রাশেদ মিয়া নামে আরেক মেট্রোযাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাসাও মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায়। দীর্ঘ ১০ বছর থেকে ওই এলাকায় আমি পরিবার নিয়ে বসবাস করি। কিন্তু মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছি। প্রতিদিন স্ত্রী-সন্তানরা বাসা পরিবর্তনের কথা বলতো। কিন্তু টাকার অভাবে বাসা পরিবর্তন করতে পারি নাই। গতকাল মেট্রোরেল উদ্বোধন শেষে আজ সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমার ছেলেকে নিয়ে প্রথম দিনই মেট্রোরেল চড়তে এসেছি।
রাশেদ মিয়া বলেন, অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আজ আমার ছেলেকে নিয়ে আসছি। আগামী দিন আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়েও আসব। মেট্রোরেল হওয়াতে সন্তানের লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি পাব।
একই কথা জানালেন মৌসুমী ইসলাম নামে এক নারী। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমার বাসা শেওড়াপাড়া। বাসার পাশ দিয়েই মেট্রোরেল গেছে। নির্মাণকাজ চলাকালে অনেক কষ্ট হয়েছে। ভোগান্তির শেষ ছিল না। কিন্তু এখন মেট্রোরেল চালু হয়েছে। তাই অতীতের সকল কষ্ট ভুলে গেছি। এখন সত্যিই আনন্দ লাগছে। এটা বলে বুঝাতে পারব না।
বিজ্ঞাপন
শুধু জাহিদ, রাশেদ কিংবা মৌসুমীই নন, মিরপুর এলাকায় কয়েক হাজার বাসিন্দারা মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর সব কষ্ট ভুলে গেছেন। সবার মনেই এখন আনন্দের ছোঁয়া। মেট্রোরেলের উড়াল লাইন তৈরির সময়ে থেকে রাস্তার দুই পাশে থাকা ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দোকানগুলো দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ক্রেতা খরায় ছিল। পাশাপাশি শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১২ এলাকার সড়কের দুই পাশের অসংখ্য ফ্যাশন হাউজ ছাড়াও খাবারের দোকান কিংবা হার্ডওয়্যারের ব্যবসা পরিস্থিতিও ছিল নাজুক। এমনকি অনেক দোকানই স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শুরু হয় ঢাকার প্রথম মেট্রোর নির্মাণকাজের সূচনা। এমআরটি-৬ এর স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ২০১৭ সালের ২ আগস্ট। ওইদিন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণ শুরু হয়। সবশেষ ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণ শুরু হয়।
দীর্ঘসময় ধরে নিমার্ণকাজ চলার পর অবশেষে গতকাল ২৮ ডিসেম্বর ঘটা করে এমআরটি-৬ লাইনের প্রথম পর্যায়ের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর আজ থেকে জনসাধারণের চলাচলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল। প্রথম দিনে ৩ হাজার ৮৫৭ যাত্রী মেট্রোরেল ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। তবে শুরুর দিনে অনেকেই বিদ্যুৎচালিত এই ট্রেনে যাতায়াতের চেষ্টা করেও সফল হননি। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। তবে যারা মেট্রোরেল চড়েছেন তাদের বেশিরভাগই মিরপুর ও উত্তরা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
কেআর/আইএইচ