শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দাঁড়িয়ে যাত্রাতেও ‘স্বস্তি’ মেট্রোরেলে

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৫ এএম

শেয়ার করুন:

দাঁড়িয়ে যাত্রাতেও ‘স্বস্তি’ মেট্রোরেলে

গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে চালু হয়েছে স্বপ্নের মেট্টোরেল। উদ্বোধনের পর থেকে বিদ্যুৎচালিত এই গণপরিবহন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী চলাচল করে মেট্রোরেলে। যাত্রীচাপে সিটে বসতে না পারলেও কারও কোনো বিরক্তি নেই। পুরো ট্রেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোয় দাঁড়িয়ে যাত্রাতেও স্বস্তি রয়েছে। দিনভর প্রচুর ভিড় থাকে মেট্টোরেলের প্রতিটি যাত্রায়।

কয়েকদিন ধরে মেট্টোরেলের বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি-৬ নামে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করছে। কমলাপুর পর্যন্ত চলাচল করবে বিদ্যুৎচালিত এই রেল। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ১৭টি স্টেশনের মধ্যে ইতোমধ্যে চালু আছে নয়টি স্টেশন। চলতি মাসের যেকোনো দিন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চলাচল করবে মেট্রোরেল। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শেষ করতে চায় ডিএমটিসিএল। এরপর প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে যেকোনো দিন উদ্বোধন করা হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ।

মেট্টোরেলে চালু হওয়া স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। স্টেশনগুলোতে একাধিক এমআরপি টিকিট সংগ্রহ করার বুথ রয়েছে। এছাড়াও নিজস্ব লোক দিয়ে বিক্রির কাউন্টার রয়েছে। সব জায়গায় টিকিট সংগ্রহ করতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শুরুর দিকে অনেকে ঘুরতে এলেও সেই সংখ্যা এখন কমছে। এখন যারাই মেট্রোরেলে যাত্রা করেন তারা প্রয়োজনের তাগিদে কম সময়ে গন্তব্যে যেতেই মেট্টোরেলকে বেছে নিয়েছেন।

আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন যেতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। কম সময়ে দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ায় মেট্রোরেলর প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমে বেড়েই চলছে। প্রতিটি কোচে বসে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ যাতায়াত করছে প্রতিদিন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, ঘণ্টায় ৬০ হাজার ও দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী বহনের সক্ষমতা রয়েছে মেট্টোরেলের। প্রতিটি মেট্রোট্রেনের সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা ২৩০৮ জন।


বিজ্ঞাপন


গতকাল ৫ জুলাই আগারগাঁও স্টেশনে প্রতিটি টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। আধা ঘণ্টা সময় বা কখনো তারও বেশি অপেক্ষা করে মানুষকে টিকিট কাটতে দেখা গেছে।

metro-2-(1)

সেখানে কথা হয় আসলাম হোসাইন নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আবার নিজে নিজে বুথে থেকে কাটা যাচ্ছে। সব জায়গায় লাইন। কারণ আগের চেয়ে চাপ বেড়েছে। অফিস শুরু এবং শেষের সময় বেশি লাইন হয়। দিনের সারাটা সময় একটু কম থাকে। তবে সন্ধ্যার পর আবার ভিড় বেশি হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটা যাত্রীদের সংখ্যা বেশিরভাগই একক যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করছেন বলে জানা যায়।

নিয়মিত যাতায়াতকারীরা মেট্টোরেলের স্থায়ী পাস সংগ্রহ করায় তাদের লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নেই। যাত্রীরা প্রতিটি কোচের ভেতরে দাঁড়িয়ে খোশগল্প করে সেলফি তুলে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে।

আরিফা আক্তার উত্তরা থেকে প্রতিদিন যান মিরপুর ১০ নাম্বারে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ট্রেন দেখতে শুরুর দিকে মানুষের ভিড় ছিল। এখন যারা ওঠেন তারা কাজের প্রয়োজনেই আসেন। উত্তরা থেকে মিরপুর যেতে ১০ মিনিটও লাগে না। আমার সময় অনেক বাঁচে। কখনো সিট পাই কখনো পাই না। ১০, ১৫ মিনিট সিট না পেলেও কোনো সমস্যা নেই। ট্রেনে কোনো ঝাঁকুনি নেই, এসি আছে উঠতে উঠতেই নামার সময় হয়ে যায়। তাই সিট না পেলেও কষ্ট হয় না।

একইদিন সন্ধ্যার পর উত্তরা উত্তর স্টেশনেও টিকিট কাটার লম্বা লাইন দেখা যায়। মাইকে ঘোষণা করা হয় ৭টা ৫০ এর পর টিকিট বিক্রি বন্ধ হবে। যখন টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হয় তখনো প্রতিটি লাইনে কমপক্ষে ২০ জন করে মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। টিকিট না পেয়ে তারা স্টেশন ত্যাগ করেন।

উত্তরা উত্তর স্টেশনে কাউন্টার থাকা একজন বলেন, আমাদের সবকিছুই কম্পিউটারাইজ। এখানে ৮টার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ। সব কিছু অটোমেটিক করা আছে। যাত্রীর চাপ আছে। ভবিষ্যতে হয়তো চলাচলের আরও বাড়বে সময়। যারা পাস সংগ্রহ করেছেন তাদের কোনো সমস্যা নেই। যাত্রী বেশি হওয়ায় যারা একক যাত্রার টিকিট কাটেন তাদের একটু লাইনে অপেক্ষা করতেই হয়।

metro-4

উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা সোহরাব হোসাইন বলেন, আমি এখন পর্যন্ত চারবার উঠেছি। যেহেতু নিয়মিত চলাচল করি না তাই স্থায়ী কার্ড করিনি। তবে টিকিট কাটতে যে লাইন একটু সময়ও নষ্ট হয় একটা কার্ড করে রাখব।

কাজীপাড়া যাওয়ার জন্য ট্রেনে ওঠা হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি কাজিপাড়া যাব। উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। স্টেশনে নেমে ১০ টাকা বাস ভাড়ায় চলে যাই। প্রতিদিন ট্রেনে চলাচল করে দেখেছি শত শত মানুষ যাতায়াত করে। অনেকে শখের বসে দাঁড়িয়ে থেকে বাইরের দৃশ্য দেখে। এখানে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করলেও কারও মধ্যে কোনো বিরক্তি নেই। বাসের মতো ঝক্কি-ঝামেলা না থাকায় ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাতায়াতে তেমন কষ্ট হয় না। দাঁড়ানো যাত্রাও অনেকে উপভোগ করেন।’

বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও পথে মেট্রোরেল চলাচল করে। আগামী শনিবার (৮ জুলাই) থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল করবে। রাত ৮টার পর এমআরটি পাস ও র‍্যাপিড পাস ছাড়া অন্য যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে না।

ডব্লিউএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর