মিরপুরের তালতলা রোকেয়া সরণির ব্যবসায়ী ছিলেন সুলতান। এক যুগেরও বেশি সময় এখানে খাবার হোটেলের ব্যবসা করেছেন। চলছিলও বেশ। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ধুলা আর দূষণ। মেট্রোরেল নির্মাণকালীন দুর্ভোগ ও ধুলাবালিতে ক্রেতা সংকটে তিন বছর আগে অন্যত্র সরিয়ে নেন খাবার হোটেল। কিন্তু নতুন স্থানে আগের মতো চলেনি খাবার ব্যবসা। তাই ফিরতে চান পুরনো স্থানে। চিরচেনা দুর্ভোগ কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নতুন উদ্যমে চালু করতে চান হোটেলটি।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাত্র তিনদিন আগে মিরপুরের ব্যবসায়ী সুলতান এভাবেই তার হোটেল ব্যবসায় সুদিন ফেরার আশা ব্যক্ত করেন। ২৮ ডিসেম্বর (বুধবার) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
তালতলার সাবেক ব্যবসায়ী সুলতান বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণকালীন দুর্ভোগ ও ধুলাবালির কারণে একসময় হোটেলে ক্রেতা আসত না। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে হোটেল অন্যত্র সরিয়ে নেই। শুধু আমি নই, অনেকেই নিজেদের ব্যবসা গুটিয়েছেন এ সময়। করোনার থাবা তো ছিলই।

সুলতান বলেন, মেট্রোরেলের পাইলিংয়ের কাজ উদ্বোধনের পর থেকেই ব্যবসায়ীদের চাপাকান্না শুরু। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণসামগ্রীর স্তূপের কারণে মিরপুরের পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রাস্তা একেবারে সরু হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসা চালানোর কোনো পরিস্থিতিই ছিল না।
বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে সুলতান বলেন, এখন সেই ধুলাবালি নেই। সব সমস্যা সমাধানের পথে। ঢাকার অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে এলাকাটি পরিচ্ছন্ন। কিন্তু এখন দোকান ভাড়া পাওয়াই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মনে করেন, বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল চালু হলে ব্যবসা আগের চেয়ে জমবে। ফিরবে সুদিন।
বিজ্ঞাপন
দোকানিরা বলছেন, প্রতীক্ষিত স্বপ্ন রূপ নিচ্ছে বাস্তবে। এরই মধ্যে মিরপুরের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হতে শুরু করেছে। আবাসিক ভবনও রূপ নিচ্ছে বাণিজ্যিকে। ক্রমাগত বাড়ছে দোকান। গড়ে উঠছে নতুন নতুন শপিংমল। উত্তরা অংশে গড়ে উঠছে অসংখ্য আবাসন প্রকল্প। সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যর এক নতুন দিগন্ত উন্মচিত হবে বলে আশা করছেন তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, কিছুদিন আগে স্থানটি যতটা বিরক্তির কারণ ছিল, এখন ঠিক ততটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে। সড়কে ফিরেছে গতি। অসহনীয় যানজট নেই। ধুলার রাজ্যে যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তারা ফিরে আসছেন। মেট্রোরেলের এ যাত্রা নগর জীবনে গতি আনার পাশাপাশি ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশও তৈরি করবে বলে আশা করছেন তারা।
আগারগাঁও স্টেশন ঘিরে রয়েছে বিসিএস কম্পিউটার সিটি (আইডিবি)। কথা হয় আইডিবি ভবনের মুজাহিদ শুভ নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। কষ্টের অবসান হয়েছে। আশা করি যাত্রীরা সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। আমাদের ব্যবসাতেও গতি ফিরবে।

মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের ব্যয় মেটাতে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে স্টেশনগুলোতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নীতিমালাও করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এমআরটি-৬ লাইনের চারটি স্টেশনের চত্বরে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে বানানো হচ্ছে স্টেশন প্লাজা।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়বে। স্টেশনগুলোতেও কিছু বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা আছে। যে চারটি স্টেশনে প্লাজা থাকবে সেখানে সীমিত পরিসরে কিছু দোকান স্থাপন করা হবে।
ডিএইচডি/জেএম/

















































































































































































































