অপেক্ষার প্রহর ঘনিয়ে স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার আর অল্পসময় বাকি। পদ্মা সেতুর পর এবার বাস্তবে ধরা দিচ্ছে দেশের আরও একটি বৃহৎ প্রকল্প। একদিন বাদেই (বুধবার) ঘটা করে উদ্বোধন হতে চলেছে বিদ্যুৎচালিত দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই রেলে সংযোগের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ২১ কিলোমিটার। এতে থাকবে মোট ১৭টি স্টেশন। যারমধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয় সরণী ও মতিঝিলে হচ্ছে আইকনিক স্টেশন। এছাড়া বাকিগুলো সাধারণ স্টেশন।
বিজ্ঞাপন
২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শুরুতে মেট্রোরেল চলবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত। এই অংশের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে রয়েছে মোট নয়টি স্টেশন। যেখানে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলে চালকের আসনে থাকছেন পাঁচ থেকে ছয় জন নারী। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির তথ্যমতে- মরিয়ম আফিজা উদ্বোধনী দিনই চালকের আসনে বসার প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
এদিকে, শেষ মুহূর্তে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে- প্রতিটি স্টেশনকেই গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিকভাবে। সেই সঙ্গে স্টেশনগুলোর পরতে পরতে রয়েছে প্রযুক্তি ছোঁয়া। এরমধ্যে রাজধানীর আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রীদের ওঠানামায় নির্মিত হয়েছে চারটি সিঁড়ি। যেখানে সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আবার প্রবীণ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য রাখা হয়েছে লিফট ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও চোখে পড়ার মতো।
অন্যদিকে, উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত মেট্রোরেলের স্টেশন দেখতে প্রতিনিয়তই এখন ভিড় করছেন মানুষ। কেউবা চলার পথে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও দেখছেন এর নান্দনিক সৌন্দর্য।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় পণ্য ডেলিভারি করতে এসেছিলেন আনোয়ার হোসেন। তবে একফাঁকে খানিকটা সময় বের করে দেখছেন মেট্রোরেলের স্টেশন। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘পরশু উদ্বোধন। আমরা তো আর সেইদিন উঠতে পারুম না। ডিউটিও আছে। আজ একটু সুযোগ করে আসলাম। খুব সুন্দর হইছে।’
একই ধরনের অভিব্যক্তি জানালেন আগারগাঁওয়ের তালতলা এলাকার বাসিন্দা এবাদত হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেদিন মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়, সেদিন থেকে দেখতেছি। আমরা এই কাজের কারণে অনেক ভোগান্তি সহ্য করেছি। তবে শেষ পর্যন্ত যখন সবকিছু হয়ে গেল, এখন ভালো লাগছে। মেট্রোরেলে ওঠার অপেক্ষায় আছি।’
জাপানের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশের প্রথম এই মেট্রোরেল প্রকল্প। এই রুটে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। যার প্রত্যেকটিতে থাকবে ৬টি করে কার। যাত্রী নিয়ে যা ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। পাশাপাশি এর উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা থাকছে।
২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। আর মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় উত্তরা (দিয়াবাড়ি) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ হয়েছে।
পুরো মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এই পথে থাকা নয়টি স্টেশন হলো- উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও।
কারই/আইএইচ