রাজধানী ঢাকাবাসীর জন্য বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলব্যবস্থার যুগে প্রবেশ করেছে বুধবার। এদিন ঘটা করেই দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে অতিথিদের নিয়ে মেট্রোভ্রমণ উপভোগও করেছেন সরকারপ্রধান।
উদ্বোধনের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন সাধারণ যাত্রীরা। তাই উত্তরার দিয়াবাড়ী স্টেশনে ভোর থেকেই মেট্রোরেলে চড়ার জন্য সাধারণ মানুষের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। কেউ কেউ ফজরের নামাজের আগে থেকেই স্টেশনে উপস্থিত হয়েছেন। রাজধানীর উত্তরা স্টেশনে আসা যাত্রীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে ‘চাতকের মতো’ অপেক্ষায় ছিলাম। আজ থেকে সবাই উঠতে পারবে এ গণপরিবহনে। তাই প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আমি ভোর ৫টায় এসেছি।
এদিকে দেশের প্রথম মেট্রোভ্রমণ ঘিরে ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে যাত্রীদের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা ও বিধিনিষেধও জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বের অতিরিক্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১০ গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
ডিএমটিসিএল বলছে- মেট্রোরেলে চড়ার সময় সঙ্গে পোষা প্রাণী; যেমন- কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি বহন করা যাবে না। পাশাপাশি সঙ্গে রাখা যাবে না বিপজ্জনক বস্তু; যেমন- আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, চাকু। এছাড়া স্টেশনে বা ট্রেনে ফেলা যাবে না থুথু কিংবা পানের পিকও। আর পাবলিক প্লেসের মতো মেট্রোরেলেও ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে বসেও কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
বিজ্ঞাপন
যেভাবে মিলবে টিকিট
বৃহস্পতিবার থেকে চালু হওয়ার পর মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা (সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা)। এছাড়া উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে প্রথম দিকে ট্রেন মাঝপথে কোথাও থামবে না। এ ক্ষেত্রে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট (কার্ড) কাটা যাবে। পৌনে ১২ কিলোমিটারের এই পথের ভাড়া ৬০ টাকা।
পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে স্টেশনে দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে। এরমধ্যে একটি স্থায়ী এবং অন্যটি একবারের যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড। প্রথম দিকে মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই এই কার্ড বিক্রি শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরেও এটি কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমটিসিএল। ১০ বছর মেয়াদী স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। আর এই কার্ড দিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণে প্রয়োজনমতো টাকা রিচার্জ করতে পারবেন যাত্রীরা।
কোন স্টেশনে ভাড়া কত?
উদ্বোধনের কয়েকদিন আগেই মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৫ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। অর্থাৎ মেট্রোরেলে চড়তেই লাগবে ২০ টাকা।
ডিএমটিসিএলের প্রকাশিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশন পর্যন্ত ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ৫০ টাকা গুণতে হবে একজন যাত্রীকে।
এছাড়া পল্লবী থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২০ টাকা। তবে পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীদের গুনতে হবে ৩০ টাকা।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, আপাতত মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে সরাসরি ট্রেন আসবে আগারগাঁও স্টেশনে। ভাড়া হবে ৬০ টাকা। মাঝে কোনো স্টেশনে ট্রেন থামবে না। আগামী ২৬ মার্চ থেকে মাঝের সব স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা শুরু হবে।
ভাড়া লাগবে না যাদের
মেট্রোরেলে চলাচল করতে শিশু ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া দিতে হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুর উচ্চতা ৩ ফুটের কম হতে হবে এবং সঙ্গে অভিভাবক থাকতে হবে। কিন্তু অভিভাবক সঙ্গে না থাকলে ও তিন ফুটের বেশি হলেই ভাড়া দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের হাফপাস থাকছে না
মেট্রোরেলে বাসের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া থাকছে না। তবে যারা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি পাস ব্যবহার করবেন, তারা ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। এ ক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। আর উত্তরা দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করলে ভাড়া গুণতে হবে ৬০ টাকা।
মেট্রোরেলে ধূমপানে মানা
সব পাবলিক প্লেসের মতো মেট্রোরেলেও ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে বসেও কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। এছাড়া স্টেশনে বা ট্রেনে কোথাও ময়লা ফেলা যাবে না। পাশাপাশি উচ্চ শব্দে গান বাজানো বা রিংটোন নিষেধ করা হয়েছে।
এসব নির্দেশনার বাইরেও ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা ছাড়াও সহযাত্রীকে প্রয়োজনে সহায়তা, মনোযোগ দিয়ে ঘোষণা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকাসহ সর্বক্ষেত্রে ভদ্রতা ও সৌজন্য বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
কেআর/এএস