বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মেট্রোরেলে পূর্বাচল হাইওয়ের কতটা ক্ষতি হবে, কী বলছে কর্তৃপক্ষ

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১০ এএম

শেয়ার করুন:

মেট্রোরেলে পূর্বাচল হাইওয়ের কতটা ক্ষতি হবে, কী বলছে কর্তৃপক্ষ
ফাইল ছবি

১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িল-কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক নির্মাণকাজ শেষের দিকে। এর মধ্যেই ওই রুটে পাতাল রেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে পূর্বাচল হাইওয়ের একাংশ ভাঙা পড়বে এবং হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে খুব একটা বেশি ক্ষতি হবে না। তারা সমন্বয় করেই কাজ করেছেন।  

কর্তৃপক্ষের দাবি, মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশনগুলো সড়কে আড়াআড়ি তিনটি করে কলামের উপর স্থাপিত হবে। এখানে দুই পাশের দুটি কলাম এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে গ্রিনবেল্ট বা সবুজ ভূমির উপর থাকবে। আর মাঝখানের কলামটি সড়ক বিভাজকের উপর নির্মাণ করা হবে। এতে স্টেশনগুলো এক্সপ্রেসওয়ের মূল ক্যারেজওয়ের পেভমেন্টের কোনো জায়গা দখল করবে না। অধিকন্তু বিদ্যমান সড়ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি আন্ডারপাস রয়েছে। এই আন্ডারপাসগুলো এবং মেট্রোলাইনের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ড নেই। কারণ ভায়াডাক্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, আন্ডারপাসের উপর কোনো পিয়ার থাকবে না এবং এমআরটি লাইন-১ আন্ডারপাসগুলোকে কোনো ক্ষতি করবে না। অন্যদিকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি রাউন্ড অ্যাবাউট রয়েছে। এই রাউন্ড অ্যাবাউটগুলোর বৃত্তের ভেতরের ফাঁকা অংশে ভায়াডাক্টের পিয়ার বসানো হবে। ফলে রাউন্ড অ্যাবাউটগুলোর ছাদ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের মতো এমন বিশাল কর্মযজ্ঞের সময় কিছুটা বিড়ম্বনা পোহাতে হবে জানিয়ে ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প পরিচালক (লাইন-১) মো. আবুল কাসেম ভূঁঞা ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশাল কর্মযজ্ঞের সময় জনসাধারণের কিছুটা ভোগান্তি আমাদের দেশে নয়, এটা রোধ করা কোনো উন্নত দেশেও সম্ভব নয়। তবে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেই বিড়ম্বনা সাময়িক এবং মাত্রাও খুব সামান্য। জনমানুষ প্রকল্প কাজ শেষে যে সুবিধা ভোগ করবে, সেই তুলনায় এই বিড়ম্বনা বড় কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়।

মো. আবুল কাসেম ভূঁঞা বলেন, এমআরটি লাইন-১ এর রুট এলাইনমেন্ট ২০১৫ সালে প্রণীত আরএসটিপি (রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান)-তে প্রস্তাব করা হয় এবং সেই মোতাবেক সম্ভাব্যতা যাচাই ২০১৭-১৮ সালে সম্পন্ন হয়। জাইকার প্রণীত ওই সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও রীতিনীতি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগিতার বিষয়গুলো বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল এবং পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রণীত আরএসটিপিতে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না।


বিজ্ঞাপন


আবুল কাসেম ভূঁঞা আরও বলেন, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজে দুটি অংশ। একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল বা পাতাল মেট্রোরেল এবং অন্যটি এলিভেটেড মেট্রোরেল বা উড়াল মেট্রোরেল। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের পশ্চিমপ্রান্ত অর্থাৎ কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছাকাছি থেকে উড়ালপথে মেট্রোরেলের শুরু এবং শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়ের পূর্বপ্রান্তে কাঞ্চন সেতুর কাছে গিয়ে। ভায়াডাক্ট পিয়ার/কলামের উপর স্থাপিত হবে। ভায়াডাক্টের এই পিয়ারগুলো পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যবর্তী প্রশস্ত মিডিয়ান বা সড়ক বিভাজকে নির্মাণ করা হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে বিদ্যমান সড়ক কার্যত কোনোরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে পিয়ার ও ভায়াডাক্ট নির্মাণকালীন এক্সপ্রেসওয়েতে চলমান যানবাহন নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়ক বিভাজকের দুই পাশে উভয় মুখে একটি করে লেন বন্ধ রাখা হবে। এক্ষেত্রেও সড়ক পেভমেন্টের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে নির্মাণ শেষে অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পেভমেন্ট সারফেসকে সংস্কার করে দেওয়া হবে, যেমনটা করা হয়েছে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে।

RR2

এর আগে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য পূর্বাচল হাইওয়ের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেছেন, যেকোনো কাজ করতে গেলেই কিছু সমস্যা হয়। মেট্রোরেল নির্মাণে পূর্বাচল তিনশ ফুটের (পূর্বাচল হাইওয়ে) তেমন ক্ষতি হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে কারও জমি নেওয়া হয়, কারও ভবন নেওয়া হয়, কারও বাড়ি ভাঙা পড়ে। তার জন্য অবশ্যই আমরা ক্ষতিপূরণ দিই। তার আগে আমরা কতটুকু ক্ষতি হবে তা স্টাডি করি। এক্ষেত্রে তিনশ ফিট সড়কের তেমন ক্ষতি হবে না। সামান্য ক্ষতি হবে। এতে রাস্তার বিশাল ক্ষতি হবে এটা বলা যাবে না।

বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, রাস্তার মধ্যে (মাঝখানে) লাইট লাগানো হয়নি। এখন কি প্রশ্ন জাগে না, কেন লাইট লাগানো হয়নি? কারণ আমাদের মধ্যে সমন্বয় হয়েছে। মাঝ দিয়ে মেট্রোরেলের লাইন যাবে বলে লাইট লাগানো হয়নি। এটাই সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িল-কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক নির্মাণ করেছে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া কাজ নির্ধারিত সময় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিংহভাগ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের যেকোনো সময় প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হবে। এই অবস্থায় দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য কুড়িল-কাঞ্চন ব্রিজ হাইওয়ের (পূর্বাচল) একাংশ ভাঙা হচ্ছে বলে সম্প্রতি খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। রাজউক ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নতুন এই সড়ক ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা মাশুল দিতে হবে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই খবরে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এর মধ্যেই কর্তৃপক্ষ দাবি করল, ক্ষতির পরিমাণ সামান্যই।

ডিএইচডি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর