শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ঈদের দিনেও বাচ্চাদেরকে মাইনষের দেওয়া চিড়া-মুড়ি খাওয়াইছি’

এ আর জুয়েল
প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২২, ০১:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ঈদের দিনেও বাচ্চাদেরকে মাইনষের দেওয়া চিড়া-মুড়ি খাওয়াইছি’

‘ঈদের দিনেও বাচ্চাদের মাইনষের দেওয়া চিড়া আর মুড়ি খাওয়াইছি, বাইচ্চাইনতেরে ঈদের নয়া জামা কাপড় তো দূরে থাক ঘরে তো ভাতই নাই।’ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার মিয়া কান্নাজড়িত চোখে বলছিলেন কথাগুলো। 

ঈদের দিন সকাল গড়িয়ে দুপুর। তখনও ঘরের উনুনে আগুনই জ্বলেনি। বাচ্চাদের মুখে সেমাই তো দূরের কথা একমুঠো ভাতও পেটে পড়েনি। অপেক্ষা— কখন কেউ একটু গোশত আর ত্রাণ দিবে। 

রোববার (১০ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।  অথচ একসময় আনোয়ার মিয়া ধুমধাম করে ঈদ আয়োজন করতেন। প্রতিবছরই দিতেন কোরবানি। এবারে গল্পটা তার একদমই ভিন্ন। বানের জলে পুরো ঘর পানিতে ভেসে গেছে। ভেসে গেছে এত বছরের তিলতিল করে গড়ে তোলা সাজানো সংসারের জিনিসপত্র। 


বিজ্ঞাপন


জানান, সেদিন রাতে (বন্যার সময়) কোনোরকম নিজের জীবন আর সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। বানের পানি কমলেও আনোয়ার মিয়ার বাড়িঘরের অস্তিত্বই নেই, খোলা আকাশের নিচে মাচা বানিয়ে গেল ২৩ দিন ধরে আছেন এখানেই। তাই এবারে ঈদটা তার কাছে সবচেয়ে কষ্টের। বাচ্চাদের মুখে একমুঠো খাবার দিতে অপেক্ষা শুধু ত্রাণের।
FLOOD SYLHETআনোয়ার মিয়া  বলেন, ‘প্রতি ঈদ ধুমধামে করেছি। এবার থাকার মতো ঘরবাড়ি নেই, একবেলা খাবার চাল ডাল নেই, গায়ের কাপড় নেই। বাচ্চাদের মুখে তাকাতে পারি না। ঈদ আমার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন চিন্তা কেমনে নিজের থাকার মতো ঘর করবো।’

একই গ্রামের রানু বিবি গেল ৪০ বছর ধরে যে ঘরে বাস করতেন, স্বামী-সন্তানের স্মৃতির সেই ঘরটুকু পানিতে ভেসে গেছে। চিহ্নটুকুও নেই। আশ্রয়কেন্দ্র রাত কাটান। আর দিনে নিজের শেষ সম্বল ভিটেটুকু এসেছেন দেখতে। ঈদের দিনটা তার কাছে অন্য সাধারণ দিনের মতোই। তিনি বলেন, ‘ঈদ ইবার আমরার নাই। খাইয়া বাঁচতাম কোমনে হেই চিন্তায় মরি। কোনদিন বাড়িত যাইতাম পারমু তার ঠিক নাই।’

এমন গল্প সুনামগঞ্জের বানভাসি বহু পরিবারের। অনেকের ঘরে এক বেলার খাবার নেই। অনেকেরই নেই ঈদ উপলক্ষে কোনো আয়োজন। কারো একটু গোশতের অপেক্ষা, কারো ত্রাণের জন্য অপেক্ষা।

শুধু সৈয়দপুর গ্রামেই যে কেবল এমন মর্মস্পর্শী দৃশ্য, তা নয়। জেলার কমপক্ষে দুই হাজার গ্রামের দৃশ্যপট একই ধরণের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ১০৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদের দিন পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৭৫ জন বানভাসি মানবেতর দিন যাপন করছেন। ঈদের দিনেও আশ্রয় কেন্দ্রে তারা।
SUNAMGONJ EID
ভয়াবহ বন্যার কষ্ট কেবল দরিদ্র পরিবারেই নয়। জেলাজুড়ে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সকলেরই কষ্ট আছে।

গেল ১৬ জুন ভয়াবহ বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে জেলার প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। গেল কয়েকদিন বন্যার পানি কমলেও এখনও বাড়ি ফিরতে পারছেন না অনেকে। সড়কেই মানবেতর জীবন পার করছেন বানভাসি কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

জেলা প্রশাসক মো জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, বানভাসি মানুষের পাশে দফায় দফায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ যাচ্ছে। বিধ্বস্ত ৫ হাজার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ১০ হাজার টাকার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এক লাখ ২০ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল দেওয়া হচ্ছে। ঈদের দিনও বন্যার্তদের কোরবানির গোশত ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর