স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেট-সুনামগঞ্জ-কুড়িগ্রাম ও হাওর অঞ্চল। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ। বন্যার তোড়ে ভেসে যায় বহু ঘরবাড়ি-সম্পদ। নেই খাবার, পানের উপযোগী পানি। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীদের ঘর থেকে বের হয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীর সভাপতির নির্দেশ পেয়েই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ছুটে যান বন্যাকবলিত এলাকায়। কেউ সংগঠনের উদ্যোগে, কেউবা নিজ উদ্যোগে, যে যেভাবে পেরেছেন বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আওয়ামী লীগের ত্রাণ উপকমিটির উদ্যোগে বন্যার্তের মাঝে খাবার, নগদ অর্থ ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে নিয়মিতভাবেই।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য আসে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন বন্যার্তদের পাশে থেকে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতার।
নির্দেশনা পেয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল আর উত্তরের জনপদে বানভাসীদের পাশে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ। বর্তমান ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের পাশাপাশি বানভাসি মানুষের জন্য খাবার ও পানযোগ্য পানি সরবরাহ করতে দেখা গেছে সাবেকদেরও। অংশ নিয়েছেন উদ্ধার কাজেও।
বিজ্ঞাপন
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম মাঠে নামে সিলেটের শাহজাহাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের উদ্যোগে বানভাসিদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে।
একইভাবে বন্যার্তদের পাশে রয়েছে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম ও সহযোগী প্রায় সকল সংগঠন।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের উদ্যোগে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিতরণ করা হয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী। আবার বন্যা পরবর্তী বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেও কাজ করে যাচ্ছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি নিজ উদ্যোগে পৌঁছেছেন সিলেটে। নৌকায় ঘুরে ঘুরে বানভাসীদের ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছেন খাবার।
ডেইজি ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দেন, সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করি। করোনাকালে আমি আমার সাধ্যমত মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এবার বন্যায় নিজের সামর্থ্য যেটুকু ছিল, সেটুকু দিয়েছি, পাশাপাশি অনেকে আমার কাছে সহযোগিতা পাঠাচ্ছেন, সব মিলিয়ে সিলেটবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করছি।'
এদিকে কুড়িগ্রামে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে স্থানীয় ছাত্রলীগকে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শুভ্র মাহমুদ জ্যোতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এ কে এম তৌহিদ আলম আখেরুজ্জামান তাকিমকে কাজ করতে দেখা গেছে কুড়িগ্রামে। তাদের যৌথ উদ্যোগে খাবার ও পানীয়র পাশাপাশি বন্যাদুর্গত নারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে স্যানিটারি প্যাড।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বন্যা শুরুর পরপরই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়, যা এখনো চলমান আছে বলে জানিয়েছেন দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে সুজিত রায় বলেন, 'দুর্দিনে, দুর্বিপাকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। সরকারের পাশাপাশি দল অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে যাচ্ছে।'
সুজিত রায় বলেন, 'মঙ্গলবার (৫ জুলাই) আমাদের কর্মসূচি আছে। তিন জেলার দশটি উপজেলাকে নিয়ে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দশটি উপজেলার আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, এর আগে কয়েক দফা বিভিন্ন জেলাতে সহযোগিতা করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এই সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান সুজিত। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। সে পর্যন্ত এই ত্রাণ সহযোগিতাও অব্যাহত থাকবে আর নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ঢাকা মেইলকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের দল। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের বিপদে-আপদে জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছে। এটা সেই প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই। সেই পূর্ব পাকিস্তান থাকাকালেই জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় যখন এসেছে, তখনও আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে ছিল।'
হানিফ বলেন, 'দুর্যোগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে ছিল, জনগণকে সাধ্যমত সহযোগিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলে থাকা অবস্থায়ও সবসময় মানুষের পাশে থেকেছেন।'
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে, সরকার থেকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা, পুনর্বাসন সহায়তা দিতে।'
করোনাকালীন প্রায় দুই কোটি মানুষকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
কারই/এমআর