শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সিলেটে পানি কমলেও আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজার মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২২, ০৮:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

সিলেটে পানি কমলেও আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজার মানুষ

অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সিলেটের। বর্তমানে বন্যার পানি কমলেও আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজারে বেশি মানুষ অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তিন কোটি টাকা বন্যাকবলিতদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। তাছাড়া নিম্নাঞ্চলে পানি থাকা লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখতে আরও প্রায় ৭০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এসব অর্থ বরাদ্দ পেতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত পাঁচ কোটি টাকা ১০ হাজার টাকা হারে পাঁচ হাজার পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

রোববার (৩ জুলাই) বন্যাত্তোর পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে এসব তথ্য জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।


বিজ্ঞাপন


জেলা প্রশাসক জানান, গত ১৪ জুন শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়ন ও পাঁচটি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার চার লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারের প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন। প্রায় ৪১ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হওয়া ছাড়াও বন্যায় প্রাণহানি হয়েছে ১০ জনের। এখনও নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

sylhet2

সিলেট জেলায় ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন লোক আশ্রয় গ্রহণ করেন উল্লেখ করে ডিসি বলেন, বর্তমানে অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অনেক লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজেদের বাসা-বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে এখনও ৪১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৬৮৫ জন লোক অবস্থান করছেন। এছাড়াও বন্যাকবলিতরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩১ হাজার ৯৭টি গবাদিপশু নিয়ে আসলেও বর্তমানে ৫৩০টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।

ইতিমধ্যে সিলেট জেলার বন্যাকবলিতদের মধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত নগদ প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরণ করেছি। তবে এ টাকাই যথেষ্ট নয়। এখন নিম্নাঞ্চলের বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করতে আরও ৭০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং ৫০ লাখ টাকা নগদ বিতরণের জন্য প্রয়োজন। এই টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বন্যাকবলিত সিলেট জেলায় এক হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ডিসি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যায় বেসরকারিভাবে (বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে) নগদ ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ টাকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ৫১ হাজার ৮২৫ প্যাকেট খাবার পেয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে ২২ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, ১৩ টন চাল, ১০ হাজার পিস স্যালাইন, ১০০ পিস গ্যাস লাইট, ৬০০ প্যাকেট শিশুখাদ্য, ১২শ পিস মোমবাতি ও ১০টি নৌযান পায় জেলা প্রশাসন। এগুলোর সবই বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

sylhet33

জেলার পাঁচ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার হারে পাঁচ কোটি টাকা বণ্টন করা হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিটি করপোরেশনসহ ১৩টি উপজেলা পাঁচটি পৌরসভা বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়িত আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দের চেক পাওয়া গেছে। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য প্রাথমিকভাবে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল সোমবার (৪ জুলাই) থেকে বরাদ্দের টাকা বিতরণ শুরু করা হবে। এসব অর্থ উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই সকল দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। এ লক্ষ্যে আমরা তালিকাও করেছি। আমিসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানেরা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণে তহবিলের টাকা তুলে দেব।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইয়াসমিন নাহার রুমা, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর