বানের জলে ভাসছে পুরো সুনামগঞ্জ। আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা জীবন বাজি রেখে সেখানে অনেকে বেঁচে গেলেও মৃত মানুষের জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি নেই কোথাও। জেলার ইব্রাহিমপুরে বন্যার সময় নিখোঁজ হওয়া দুই জনের লাশ খুঁজে পেলেও দাফনের জায়গা পাচ্ছেন না এলাকবাসি ও পরিবারের লোকজন। তাই সাতদিন ধরে লাশ বাক্সবন্দি করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বাঁশ দিয়ে।
জানা যায় ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ আলী গত শুক্রবার রাত ১২টায় ইন্তেকাল করেন। কিন্তু কবরস্থান ডুবে থাকায় ছয়দিন ধরে লাশ পড়ে আছে। দাফনের জায়গা নেই। এ বিষয়ে ঢাকা মেইলের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন আশরাফ আলীর ছেলে ইব্রাহিম মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় লাশ দাফন করতে না পারলে অনেক সময় লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার বাবার লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার সাহস আমার হয়নি। তাই বাবার লাশ পলিথিন মুড়িয়ে বাক্সবন্দি করে বাঁশের উপর বেঁধে রেখেছি।
বিজ্ঞাপন
এরকম হৃদয়বিদারক ঘটনা সুনামগঞ্জ শহরতলীর প্রায় সব গ্রামেই। আশরাফ আলী ছেলে ইব্রাহিম মিয়া ও এলাকাবাসী জানায়, বন্যার সময় কবরস্থান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লাশ দাফন করা যায় না। তাই হাওর এলাকার কবরস্থানগুলো উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি। সারা সুনামগঞ্জ জেলা ছয় দিন ধরে ডুবে আছে থৈথৈ পানির নিচে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার এমনকি উঁচু কবরস্থানও পানির নিচে ডুবে আছে। পা ফেলার এতটুকু শুকনো জায়গা নেই। মানুষের বাড়িঘরে গলা পর্যন্ত পানি।
একই জায়গাতে আরও একটি লাশ পড়ে আছে। একই গ্রামের মিনা বেগমের বাবা সাজুল মিয়ার লাশ এটি। শুক্রবার ঢাকা থেকে ফেরার পথে পানিতে পড়ে মারা গেছেন সাজুল। বাবার লাশটা খুজে পেলেও ছয়দিন ধরে দাফনের জায়গায় না পেয়ে বাক্সবন্দি করে পানিতে রেখেছেন তিনিও।
মিনা বেগম বলেন, গত ছয়দিন ধরে ওকটু মাটির জন্য কতজায়গায় ঘুরেছি। বাবারে দাফন করতে পারিনি, শান্তনা শুধু বাবার লাশটা খুজে পেয়েছিলাম। এখন পানি কমার অপেক্ষায়; যদি একটু জায়গা পাই বাবারে দাফন করতে পারবো।
সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, কবরস্থানের পাশে লাশ দাফন না করে ফেলে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক। আর এখন লাশ পঁচে গন্ধ বের হচ্ছে। এতে মানুষ অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিয়ে কবরস্থানগুলো উঁচু করলে বর্ষায় লাশ দাফন করা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না।
বিজ্ঞাপন
সাজুল মিয়ার মেয়ে মিনা বেগম ও ইব্রাহিম মিয়ার মতো করুন এমন গল্প সারা জেলাতেই। কেউ স্বজনের লাশ খুঁজছেন। কেউ পাচ্ছেন লাশ মরদেহ পেলেও দাফন করতে পারছেন না।
প্রতিনিধি/ একেবি