সিলেট-সুনামগঞ্জের পর এবার হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনের বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কালনী-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
ইতোমধ্যে জেলার দুই উপজেলার এ পর্যন্ত ৪০টি গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। তাদেরকে আশ্রয়ন কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) ভোররাত থেকে হবিগঞ্জে মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে কালনি-কুশিয়ারাসহ জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকে।
শুক্রবার বিকেলের দিকে কুশিয়ারার পানি বেড়ে বাঁধ ডুবে হাওরে ডুকতে থাকে পানি। সাথে প্লাবিত হয় নিচুঁ এলাকাগুলো। এ সময় আজমিরীগঞ্জ-পাহারপুর ও আজমিরীগঞ্জ-কাকাইলছেও সড়ক ডুবে যাওয়ায় দুটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
রাতভর বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি আরও বাড়তে থাকে। শনিবার (১৮ জুন) সকালে পাহাড়পুর-মারকুলি সড়কের নিখলির ঢালা এবং ফিরোজপুর-বদলপুর সড়কের কৈয়ার ঢালায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। প্লাবিত হতে থাকে একের পর এক গ্রাম।
আজমিরীগঞ্জ আজমিরীগঞ্জ পৌর লাকার আদর্শনগর, জয়নগর, শরীফনগর এলকায় অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরে। এছাড়া নতুন বাড়ি, ফিরোজপুর, পাহাড়পুর, কাকাইলছেও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও মারকুলি এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পরেন কয়েকশ’ পরিবার।
নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নোমান হোসেন জানান, ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৩শ’ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ চলছে।
একই অবস্থা দিঘলবাগ ইউনিয়নের। সেখানেও বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুশিয়ারা-কালনী ও খোয়াই নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এছাড়া আজমিরীগঞ্জে রাস্তা ভেঙে পানি ডুকছে। তবে বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকারণ ধারণ করতে পারে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি ও বানবাসীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্থদের উদ্ধার ও খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসনের ৪০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত, যাবে সুনামগঞ্জ ও সিলেট বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৪০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত করেছে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৫ হাজার প্যাকেট পাঠানো হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়, সমপরিমাণ পাঠানো হবে সিলেটে। বাকি ৩০ হাজার প্যাকেট খাবার হবিগঞ্জে বন্যার্থদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেন জানান, শনিবার বিকেলে একটি কাভার্ডভ্যানে করে ৫ হাজার প্যাকেট খাবার সুনামগঞ্জে ও অপর একটি কাভার্ডভ্যানে সমপরিমাণ খাবার সিলেটে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে চিড়া, চিনি, মুড়ি, বিস্কুট, মোমবাতি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যবলেট, খাবার স্যালাইন ও দিয়াশলাই রয়েছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে কারও জরুরি ভিত্তিতে খাবার প্রয়োজন হলে ৩৩৩ হটলাইনে কল দিলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে।
এজে