- বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন
- আশ্রয়কেন্দ্রে মিলছে না ঠাঁই
- বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী
- ওসমানী বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা
- শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি সিলেটবাসী। মাত্র দুই দিনেই জেলার ১১টি উপজেলাতেই ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। সবমিলিয়ে জেলার ৮০ শতাংশ জায়গা পুরোপুরি তলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যদিও ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
বিজ্ঞাপন
বর্নার তাণ্ডবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে জেলাজুড়ে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে পানির তোড়ে ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে পারছেন না বানভাসি অনেকেই। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় জেলার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন সিলেটবাসী।

এরই মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে পানি প্রবেশ করেছে। ফলে আগামী তিন দিনের জন্য সব ফ্লাইট বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শাবিপ্রবি)। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্যা পরিস্থিতির কারণে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এদিকে, দিনে-রাতে সমান তালে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে বানভাসিদের। অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, এবারের বন্যা ২০০৪ সালের বন্যাকে অতিক্রম করেছে। এমনকি এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও হার মানাতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি অনবরত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বেশি প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। সেই সঙ্গে বানের জলে ভেসে যাচ্ছে কাঁচা ও টিনশেড বাড়িঘর। পাশাপাশি অনেক জায়গায় নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তাও পোঁছাচ্ছে না বানভাসিদের কাছে।

এমতাবস্থায় গত বন্যায় উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা নিয়ে প্রশাসন তৎপর থাকলেও এবার তা অপ্রতুল মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তারা বলছেন, আগে বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা কবির আহমদ জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে অবিরাম নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত ১২টা থেকে শুক্রবার (১৭ জুন) পৌনে ৪টা পর্যন্ত অন্তত ছয় ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সিলেট নগরের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আশ্রয় নিতে জড়ো হন স্থানীয় বানভাসিরা। তবে এসএসসি পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত থাকায় স্কুলটিকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে নিরুপায় হয়ে স্কুলের সামনের বারান্দাতেই অবস্থান করতে দেখা যায় বন্যার্তদের।

গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলা ও মহানগরীর অধিকাংশ জনপদ ডুবে গেছে। এরমধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। রাস্তাঘাট পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় লাখো বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না কেউ। এছাড়া গ্রামীণ এই এলাকায় পৌঁছাতে নৌকাও মিলছে না। ফলে অবস্থা আরও ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে।
তবে শুক্রবার দুপুর থেকে সেনাবাহিনী বানভাসিদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে। এরই মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ মিলে দুই জেলার আট উপজেলায় উদ্ধার তৎপরতায় শামিল হয়েছে সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিট। নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক জানিয়েছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের তিন উপজেলা ও সুনামগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে।

এদিকে, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে লাখ লাখ মানুষ। এরই মধ্যে জেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সহায়তা করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
অন্যদিকে চলমান ভয়াবহ বন্যার পানি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে প্রবেশ করায় পুরো সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে কুমারগাঁও ও বরইকান্দিতে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করেছে। এরমধ্যে কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় গ্রিডের উপকেন্দ্রের মাধ্যমে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে কুমারগাঁওয়ের ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। চলমান ধারায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অচিরেই কন্ট্রোল রুমের ভেতরেও পানি প্রবেশ করবে। তখন পুরো সিলেটের বিশাল অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।

এদিকে, শুক্রবার দুপুর থেকে কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের চারপাশে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি নিষ্কাশনের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে, সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, পুরো জুন মাসে ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু গত ১৬ জুন পর্যন্ত ৯৪ দশমিক ৮১ শতাংশ অর্থাৎ ৭৭৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। আর আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত সিলেটে ভারি বর্ষণ হবে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
/আইএইচ





























































































































































































