দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। এই হাওরতীরের একটি ইউনিয়ন মৌলবীবাজার জেলার কুলাউড়ার ভুকশিমইল। বর্তমানে ইউনিয়নটির ৯০ শতাংশ জায়গাই পানিবন্দী। হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্র। কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। তবে যেসব বাড়িতে এখনো পানিতে ছুঁই ছুঁই করছে কিংবা কোনোরকম থাকা যাচ্ছে-সেসব বাড়িতে এখনো কোনোভাবে বাস করছেন মানুষ।
এমনই এক বাড়ি ভুকশিমইল গ্রামের শেখবাড়ি। এই বাড়িতে বাস করেন ১৩-১৪ টি পারিবার। বাড়ির কোনো কোনো ঘরের একাংশ তলিয়ে গেছে আবার কোনো কোনো ঘরে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। এ বাড়ির বাসিন্দা হাসনা বেগম। ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘জীবনে এতো পানি দেখছি না। পানি কমার কোনো নাম নাই, দিন দিন খালি বাড়ে। এই পানির মাঝে কিলা থাকরাম আমরা জানি। ঘর থেকে বার অউয়া যায়, উঠানসহ চাইরোবায় দি পানি। আবার ঘরও থাকা যায় না। আরামে ঘুমানিও যায় না হাফর ডরে। গত দুই সপ্তায় ঘরোতাকি তিনটা হাপ (সাপ) মারছি। আল্লায় জানইন ইলা কতদিন থাকা লাগব।’
বিজ্ঞাপন
একই কথা বললেন এ বাড়ির আরেক বাসিন্দা শেখ কামিল আহমদ। তিনি বলেন, এখনো আমরা ঘরো পানি উঠছে না। তবে ঘরর দুয়াড়িত পানি। গত কয়েকদিনে পানি কমছিল। তবে গতকাইলকোর (গতকাল সোমবারের) মেঘে আবার পানি বাড়ি গেছে। আমরা গাওর প্রত্যেক বাড়িত প্রায় দিন হাপ দেখা যায়। হাপর ডরে কোনো মানুষই আরামে ঘুমাইতা পারইন না।
উপজেলার আরেক ইউনিয়ন ভাটেরার শাহমীর এলাকার বাসিন্দা মছব্বির আলী বলেন, ‘এখনো ঘরের ভিতর পানি হাঁটু সমান। হাকালুকিতে বন্যা দেখেছি। এইবারের মতো জীবনে কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। মা স্ত্রী ও ছোট্ট শিশুকে ইসলামনগরে শশুরবাড়িতে রেখেছি। নিজে বাড়ির কাছে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছি। প্রতিদিন বাড়ি দেখতে হয়, ঘরের ভিতর আসবাবপত্রসহ অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে।’
সরেজমিনে উপজেলার ভূকশিমইল, বরমচাল, ভাটেরা, জয়চন্ডী ইউনিয়নে বন্যা প্লাবিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত ১৭ জুন থেকে হাকালুকি তীরবর্তী এলাকাসহ কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ৭০টির বেশি গ্রাম ও পৌর এলাকার অধিকাংশ এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হয়। ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো বন্যার পানির নিচে ওইসব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি, বাজার, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকার রাস্তাঘাট। পানি খুবই ধীরগতিতে কমছে। অনেকের ঘরের ভিতর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে পড়ছেন। রান্নার চুলা, বিছানাপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের।
বিজ্ঞাপন
এইবারের দীর্ঘ বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে কর্মহীন অবস্থায় দিনযাপিত করছেন। এখনো পানি নামেনি। দীর্ঘদিন পানি ও ঢেউয়ে অনেক কাঁচা বসতঘর নষ্ট হয়ে গেছে। পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, কুলাউড়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরীর কাজ করছি। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান মহোদয়ের নির্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বন্যা পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া আছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নিতে। আমরাও খোঁজ রাখছি।
এসএএস/ একেবি