ও বাবারা তোমরা কেড়া আইছো, কি দেকতে আইছো, মোগো গেরাম তো পানিতে তলাইয়া গেছে, মোরা অ্যাহন কুম্মে থাকমু, কই যামু। খালি নদী ভাইঙ্গা মোগো সব শ্যাষ কইর্যা দেছে। যেডু জমি আছে হ্যাও ভাইঙ্গা গ্যালে পোলা-মাইয়া লইয়া কি খামু, কোন হানে থাকমু, অ্যাহন হেই চিন্তায় আছি। তোমরা এ ছবি তুললে কোনো লাভ ওইবে না।’
এভাবে আক্ষেপ করে বলছিলেন বুড়িশ্বর নদীর ভাঙ্গন কবলিত তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ষাটোর্ধ নারী আলেয়া বেগম।
বিজ্ঞাপন
বরগুনার তালতলী উপজেলায় পায়রা বুড়িশ্বরের বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। এলাকার এ গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। অন্যদিকে নদীর তীরবর্তীতে বসবাসরত মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকালে ঢাকা মেইলকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে একটি রিংবাঁধ নির্মাণ করলেও তাও এখন ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে। এলাকার স্থানীয় গ্রামবাসীরা এ ভাঙ্গন কবলিত স্থানটি ব্লক নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে নয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। বসতবাড়িসহ কৃষিজমি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ও বুধবার দুই দিন ভোর-রাতে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুটি অংশ আকস্মিক ভেঙে প্রায় ১০০ মিটার জায়গা পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে এসব এলাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ওই ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম।
স্থানীয় জব্বার জানান, পানির এ অবস্থা দেখে গ্রামবাসীর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা গ্রাম। পানির আতঙ্কে এসব গ্রামের কয়েক হাজার বসবাসকারি বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটান।
ফয়সাল সিকদার জানান, এ ভাঙ্গনে গত দুই দশক ধরে ভয়ঙ্কর পায়রা (বুড়িশ্বর) তেতুলবাড়িয়া এবং জয়ালভাঙ্গা গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি নদী ভাঙ্গনে গ্রাস করেছে। এখন নুতন করে বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া জয়ালভাঙ্গা ও তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ৪ হাজার মানুষের মধ্যে পানির আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
তেতুলবাড়িয়া গ্রামের এমাদুল বলেন, এখানে তিন বিঘা জমি ছিল। ছিল বড় বাড়ি। ৬ বারের ভাঙনে সব নদীতে নিয়ে গেছে। নদীর ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় তার এক শতাংশ ফসলের জমিও এখন নেই। কোনো মতে রাস্তার ধারে একটা ঘর বানিয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমাই। তাও আবার ভয়ের মধ্যে আছি ভাঙনে আবার ঘরটা কখন নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এখানে বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শীঘ্রই অনুমোদন হলে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো। তবে এখানে সিআইপি প্রকল্পের ফেস-২ এর সার্ভে কাজ চলমান আছেন। তবে এখানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
টিএই/এএস