সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে শাহজাদপুর ও চৌহালীতে আবারও শুরু হয়েছে নদীভাঙ্গন। ধ্বসে গেছে রাউতারা বাধসহ অন্তত ১৫টি বসতভিটা ও বিস্তীর্ন ফসলি জমি।
গেল ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবোর পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, সকালে শহরের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৮ মিটার। এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫৭ মিটার। এখানে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৩৫ মিটার। ফলে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু তিস্তায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, ফলে যমুনায় আরও কয়েক দিন পানি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সিরাজগঞ্জে বন্যা হতে পারে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, জেলার কাজিপুর পয়েন্টে গত ১২ ঘণ্টায় (১৯ জুন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২০ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) ৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
গত ২ সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে পানিবৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই এই পাচটি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষেরা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা।
শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা স্লুইসগেট সংলগ্ন বাধ ভেঙে যায়। এ অঞ্চলের ফসল রক্ষার জন্য দুই বছর আগে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী এ বাধটি নির্মাণ করে। গত ১৫ দিন আগে এ অঞ্চলের সব ফসলের মাঠের ধানকাটা শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধটি কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
একই সাথে উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিলে চলছে তীব্র নদীভাঙ্গন। এছাড়া চৌহালী উপজেলার বাগুটিয়া ইউনিয়নের নদীভাঙ্গন যেন থামছেই না। গত ২৪ ঘন্টায় এ দুটি এলাকার অন্তত ২০টি বসতভিটাসহ বিস্তির্ন ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য টুলি বেগম বলেন, উজানের ঢল ও অতি বর্ষণে গত কয়েকদিন ধরে শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগরসহ সব নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ফলে অস্থায়ী এ বাধটি প্রবল পানির চাপে দুর্বল হয়ে শনিবার বিকেলে ভেঙে যায়। এতে শাহজাদপুরসহ চলনবিলের পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের ৮ উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।
‘এছাড়া এ অঞ্চলের ৩ হাজার হেক্টর গো-চারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের গবাদি পশু বাড়ি অথবা উঁচুস্থানে স্থানান্তর করেছে। ঘাসের জমি ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হবে। এছাড়া তিল, কাউন, বাদাম, ভুট্টা, শাক-সবজি ও নেপিয়ার ঘাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে আরও অন্তত ৩ দিন। চৌহালী ও শাহজাদপুরের ভাঙ্গন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানিবৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে নানা রকমের ফসল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাউতারা, বাঁধটি মূলত ফসল রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। ফসল উঠে যাওয়ায় বাঁধটি ভেঙে গেলেও কৃষকের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
প্রতিনিধি/এএ