দুর্যোগ ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানি নিয়ে। চারপাশের দূষিত পানি নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে কলেরা, ডায়রিয়া, আমাশয়, হেপাটাইটিস-এ, টাইফয়েড ও পোলিওর মতো রোগের সংক্রমণ ঘটে। সবমিলিয়ে ভেঙে পড়ে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
দুর্যোগের সময় বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি। দূষিত পানি বিশুদ্ধ করার কিছু উপায় সম্পর্কে জানুন।
বিজ্ঞাপন
ফুটানো
গরম তাপে পানি ফুটালে এতে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীসহ রোগ-সৃষ্টিকারী জীবাণু মরে যায়। বিভিন্নভাবে এই কাজটি করতে পারেন। পানি ফুটতে শুরু করলে, প্রথমে একটি পরিষ্কার কাপড় বা কাগজ দিয়ে ছেকে নিতে হবে। এরপর ফুটন্ত পানিকে স্থির হতে দিতে হবে। পরিষ্কার পানি আবার এক মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটন্ত বিশুদ্ধ পানি ঠান্ডা হলে আঁটসাঁটভাবে মুখ বন্ধ করা পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
রাসায়নিক জীবাণুনাশক ব্যবহার
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে আগুন জ্বালানো সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে পানি বিশুদ্ধ করতে রাসায়নিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে পারেন। গন্ধহীন ক্লোরিন ব্লিচ, আয়োডিন বা ক্লোরিন ডাই অক্সাইড ট্যাবলেট ব্যবহার করে অল্প পরিমাণ পানি খাবারযোগ্য করতে পারেন। এই জীবাণুনাশকগুলো বেশির ভাগ ক্ষতিকারক বা রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে। তবে তা সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
পানিতে যদি কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকে তবে কেবল জীবাণুনাশক দিয়ে তা পানযোগ্য করা যাবে না। আবার আয়োডিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা পানি গর্ভবতী নারীদের, থাইরয়েড সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের বা আয়োডিনের প্রতি অতি সংবেদনশীলদের জন্য ক্ষতিকর। রাসায়নিকের সাহায্যে পানযোগ্য করা পানি দীর্ঘদিন পান করা যাবে না। এটি সর্বোচ্চ কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্লিচের মাধ্যমে
বাজারে বিভিন্ন ঘনত্বের ব্লিচ পাওয়া যায়। এই উপাদানটি দিয়ে পানি জীবাণুমুক্ত করার পূর্বে এর ঘনত্ব সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। বাংলাদেশে ব্লিচে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের ঘনত্ব ৫ থেকে ৬ শতাংশ হয়ে থাকে। প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে অতি সামান্য পরিমাণে ব্লিচ চা-চামচের সাহায্যে বিশুদ্ধ পানির প্রতি লিটারে যোগ করতে হবে। মিশ্রণটি ভালো করে নাড়াতে হবে। এরপর কমপক্ষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
পাতন প্রক্রিয়া
পানি বিশোধনের একটি পদ্ধতি পাতন। এই প্রক্রিয়ায় তাপ ব্যবহার করে বাষ্প আকারে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা হয়। পানিতে থাকা অন্যান্য দূষিত এবং রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানের তুলনায় পানি অল্প তাপেই ফুটতে শুরু করে। স্ফুটনাঙ্কে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত পানিতে তাপ দিতে হয়। তারপর তা বাষ্পীভূত না হওয়া পর্যন্ত ফুটন্ত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। কনডেন্সারের মাধ্যমে এই বাষ্প ঠান্ডা করা হয়। শীতল হওয়ার পরে বাষ্প পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানযোগ্য পানিতে পরিণত হয়।
সৌর জীবাণুমুক্তকরণ
জরুরি অবস্থায় সূর্যের আলো ব্যবহার করে পানি জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া এটি। প্রথমে একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের বোতল পরিষ্কার পানি দিয়ে ভরতে হবে। রৌদ্রজ্জ্বল দিনে বোতলগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় পাশাপাশি ৬ ঘণ্টা এবং মেঘলা দিনে দুদিন রেখে দিতে হবে। সূর্যের রশ্মির মাধ্যমে পানিকে আরও কার্যকরভাবে জীবাণুমুক্ত করতে বোতলগুলো শুইয়েও রাখা যেতে পারে।
পটাশ বা ফিটকিরি
জরুরি অবস্থায় পটাশ বা ফিটকিরির সাহায্যেও পানি জীবাণুমুক্ত করা যায়। এক কলসি পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে এতে থাকা ময়লাগুলো তলানিতে স্তর হয়ে জমে। পাত্রের ওপরের শোধিত পানি পান করা যাবে।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার কাগজ পাওয়া যায়। হাতের নাগালে সেগুলো থাকলে তা দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করতে পারেন। বন্যায় যতটা সম্ভব বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি পানের চেষ্টা করুন। শিশু ও বৃদ্ধদের খেয়াল রাখুন।
এনএম