বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বন্যার জন্য হাওরের সড়ক কতটা দায়ী, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২২, ১০:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বন্যার জন্য হাওরের সড়ক কতটা দায়ী, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ফাইল ছবি

সিলেট-সুনামগঞ্জসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অনবরত বৃষ্টির পাশাপাশি এর জন্য হাওরে নির্মিত অলওয়েদার সড়ককেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না এলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ রকম কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এছাড়া বন্যার পানি সরতে কোথাও সড়ক বাধা সৃষ্টি করলে তা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

তবে এর মধ্যেও বন্যার জন্য অলওয়েদার সড়ককে দায়ী করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছেন। আসলে এই বন্যার জন্য নজরকাড়া সেই সড়ক কতটা দায়ী সেটা নিয়ে অনেকের মনে রয়েছে প্রশ্ন।  


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বন্যার জন্য অলওয়েদার সড়ককে দায়ী করছেন। তিনি জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সিলেট বিভাগে বন্যা এতটা তীব্রতা পাওয়ার কারণ, পানি নামতে বাধা পাচ্ছে৷ হাওরে নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে৷  এটা পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে৷  কারণ এই অঞ্চলের পানি হাওর হয়ে নদী দিয়ে নেমে যায়। শুধু এই অবকাঠামো নয়, পাশাপাশি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। এতে পানি দ্রুত সরতে পারছে না৷’

66

তবে ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত তাতে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি ওই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা একেবারেই স্বাভাবিক বন্যা৷ এই বন্যার সঙ্গে হাওরের অবকাঠামোর কোনো দায় নেই৷ এখন যে বন্যাটি হয়েছে এটা হয়ত দুই সপ্তাহ আগে হয়েছে। এটা দুই সপ্তাহ পরে হতে পারত। অনেক সময় স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বন্যার সৃষ্টি হয়৷ এবারও তাই হয়েছে৷ কয়েক বছর পরপরই এটা হয়ে থাকে৷ এর সঙ্গে অন্য কিছু মেলানো ঠিক না৷ তবে হ্যাঁ, জলবায়ু পরিবর্তনের দায় কিছুটা আছে৷’

জল গবেষণা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ‘এবারের এইরকম আকস্মিক বন্যার পেছনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ৷  হাওরের অবকাঠামোর এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা আছে বলে আমার মনে হয় না৷ গত তিন দিন চেরাপুঞ্জিতে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, দুই হাজার ৪৮৭ মিলিমিটার, এখনও সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে৷  এরকম ধারাবাহিক বৃষ্টি হয়েছে ১৯৯৫ সালে একবার, তিন দিনে দুই হাজার ৭৯৮ মিলিমিটার আর ১৯৭৪ সালে দুই হাজার ৭৬০ মিলিমিটার৷  এরকম খুব কম দেখা গিয়েছে। হাওরের অবকাঠামো যদি পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করত তাহলে ভৈরব ব্রিজটিই হতো মূল কারণ৷  সেটা তো পানি প্রবাহে কোনো বাধার সৃষ্টি করছে না, তাহলে হাওরের এগুলো আসবে কেন?’


বিজ্ঞাপন


এদিকে শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলীদের কাছ থেকে এমন কোনো কথা জানা যায়নি। যদি কোথাও কোনো সড়কের জন্য পানি আটকে থাকে তাহলে সেগুলো কেটে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে বেইলি ব্রিজ করে দেওয়া হবে। পরিস্থিতি ভালো হলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।

55

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয় ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই অল-ওয়েদার সড়ক। প্রায় ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অল-ওয়েদার সড়কে ৫৯০.৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসিগার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯.৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকে সড়কটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এই সড়কটি দেখতে ছুটে আসছেন।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর