সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঘূর্ণিঝড়-বজ্রপাতের সময় যে আমল করতে বলেছেন মহানবী (স.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২৩, ০৪:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ঘূর্ণিঝড়-বজ্রপাতের সময় যে আমল করতে বলেছেন মহানবী (স.)

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সতর্ক ও পরীক্ষা করার জন্য বিপদ-মসিবত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় বান্দার কিছু করণীয় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত ও প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় কিছু দোয়া ও আমলের কথা উল্লেখ করেছেন মহানবী (স.)। হাদিস অনুযায়ী, এমন দুঃসময়ে রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজে মশগুল হতেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। সাহাবাদের জীবনেও দেখা যায়, তাঁরা যেকোনো বিপদে-মুসিবতে নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্যধারণ করতেন। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে— ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭)


বিজ্ঞাপন


ঘূর্ণিঝড়সহ সকল দুর্যোগে যে আমল করা সুন্নত

১) নফল নামাজ ও ধৈর্যধারণ
যেকোনো দুর্যোগে মুমিনদের করণীয় হলো- আল্লাহকে স্মরণ করা, সবর করা ও নফল নামাজে মনোনিবেশ করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)

২) তাওবা-ইস্তেগফার
যখন কোথাও ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, ঝড়ো বাতাস কিংবা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, নিরাপত্তার দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। রাসুলুল্লাহ (স.) নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর নিকট তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)

৩) দান-সদকা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হলো আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৬০০)


বিজ্ঞাপন


৪) ঝড়-বাতাস শুরু হলে দোয়া
আয়েশা (রা.) বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝড়ো বাতাস বইত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তেন— اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এই ঝড়ের কল্যাণ, এর মধ্যস্থিত কল্যাণ, এর সঙ্গে প্রেরিত কল্যাণ। আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এই ঝড়ের অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যস্থিত অনিষ্ট থেকে, এর সঙ্গে প্রেরিত অনিষ্ট থেকে। (বুখারি: ৩২০৬; মুসলিম: ৮৯৯; তিরমিজি: ৩৪৪৯)

৫) প্রবল বৃষ্টিপাত হলে দোয়া
বৃষ্টিপাত বেশি হলে সময় মহানবী (স.) এই দোয়া পড়তেন— اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا ولَا عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ علَى الآكَامِ والظِّرَابِ، وبُطُونِ الأوْدِيَةِ، ومَنَابِتِ الشَّجَرِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’ (বুখারি: ১০১৪)

৬) বজ্রপাতের সময় দোয়া
বজ্রপাত ও বিজলি চমকানোর সময় রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া পড়তেন— اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা, ওয়া লা-তুহলিকনা বিআজা-বিকা; ওয়া আ-ফিনা-ক্বাবলা জা-লিকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! গজব দিয়ে আমাদের নিঃশেষ করবেন না, আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করবেন না; এর পূর্বেই আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি: ৩৪৫০; নাসায়ি: ৯২৭)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বজ্রপাতের শব্দ শুনলেই পড়তেন, ‘সুবহানাল্লাজি ইয়ুসাব্বিহুর রা‘অদু বিহামদিহি।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২৯২১৩)

তিরমিজির বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন- اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুলহিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা জা-লিকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। বরং এসবের আগেই আমাদেরকে পরিত্রাণ দিন।’ (তিরমিজি: ৩৪৫০)

৭) আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে কোরআনের বিশেষ দোয়া
رَبَّنَا اکۡشِفۡ عَنَّا الۡعَذَابَ اِنَّا مُؤۡمِنُوۡنَ ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন’ অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।’ (সুরা দুখান: ১২)

এছাড়াও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার বিভিন্ন মাসনুন দোয়া, গুনাহ মাফের দোয়া এবং বিপদ-মসিবতের দোয়া হিসেবে পরিচিত দোয়া ইউনুস পড়াও দুর্যোগের অন্যতম আমল। 

আসলে মানুষ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সেরা জীব। তিনি অযথা শাস্তি দিতে চান না। বান্দার সীমালঙ্ঘনের কারণে তিনি অসন্তুষ্ট হন। সুতরাং আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য আমল পরিশুদ্ধ করার বিকল্প নেই। যে আমলে আল্লাহ খুশি হন, সে আমল বেশি বেশি করতে হবে। সময় থাকতে আল্লাহর পথে ফিরে আসা মুমিন মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও ভূমিকম্পসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী দোয়া ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর