ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র তাণ্ডবে ইতোমধ্যেই লণ্ডভণ্ড কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ। তীব্র বাতাস আর ঝড়-বৃষ্টিতে ছিন্নভিন্ন ওই এলাকা। বর্তমানে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েতে শুরু করেছে কক্সবাজারেও। ঝড়-বৃষ্টির ফলে জেলা শহর ছাড়াও সি বিচের আশপাশের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে বেচাকেনায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলী, সুগন্ধা বিচসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এ দিন কলাতলী রোডের সী প্যালেস বার্মিজ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের সবগুলো দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে আশপাশে দুই-একটি দোকান খোলা আছে। এই মার্কেটের পাশেই থাকা ‘এহেসান শুটকি আড়ত’ খোলা থাকলেও নেই কোনো ক্রেতা। কথা হলে আড়তের মালিক এনামুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, গত তিন দিন থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। এজন্য বেচাকেনা একদমই নেই। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ না গেলে বেচাকেনা হবে না।
কক্সবাজারের এই ব্যবসায়ী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আসার আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার শুকটি বিক্রি করতে পারতাম। এছাড়া শুক্র, শনিবার হলে প্রায় লাখ টাকার শুটকি বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন কোনো বেচাকেনা নেই। আজ (রোববার) সকালে দোকান খুলেছি, কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত এক টাকার শুটকিও বিক্রি করতে পারি নাই।
এদিকে, সুগন্ধ বিচ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই এলাকার দোকানগুলোও বন্ধ। তবে দুই একটি দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতাশূন্যতায় ভুগছেন বিক্রেতারা।
সুগন্ধা বিচের ব্যবসায়ী ও এসএন বার্মিজ দোকানের মালিক মো. সৈয়দ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, সুগন্ধ বিচে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। তাই আমাদের দোকানে বেচাকেনাও বেশি হতো। কিন্তু ‘মোখা’র কারণে এখন কোনো ক্রেতা নেই। প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান গুণতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশের বিচগুলোতে গড়ে ওঠা খাবারের দোকানগুলোও ‘মোখা’র প্রভাবের কারণে বন্ধ রয়েছে। এতে দোকানিরাও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
কলাতলী বিচের আল মোস্তফা রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজের ম্যানেজার হারুন উর রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, গত তিন দিন থেকে দোকানে বেচাকেনা কম। গতকাল (শনিবার) থেকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা লস হচ্ছে।
একই কথা জানিয়েছেন আল মক্কা রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ হোসেন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমার দোকানে ১৬ জন কর্মচারী কাজ করেন। এছাড়াও দোকান ভাড়া, কারেন্ট বিলসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রায় দিনে ৩৫ হাজার লস হচ্ছে। মোখার কারণে এমন লসের সম্মুখীন হতে হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির পর এতবড় ক্ষতি হয়নি বলেও দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে সেন্টমার্টিনে তীব্র ঝড়-বৃষ্টি হলেও বর্তমানে কক্সবাজারে হালকা বাতাস অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে ঝরছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও।
এ বিষয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজারে উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন করে মিয়ানমারের দিকে ধাবিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি তা হয়, তবে কক্সবাজারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
কেআর/আইএইচ