গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বিধ্বংসী রূপ নেওয়ার আগেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছে স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মানুষ সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ সদরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা সংকেত জারি হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয় টেকনাফে চলে গেছে প্রায় হাজারখানেক মানুষ।
বিজ্ঞাপন
মাহবুবর রহমান জানান, সার্ভিস বোট, ফিশিং বোটসহ বিভিন্ন নৌ-যানে করে দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদে সরে যাচ্ছে। শুক্রবার (১২ মে) দ্বীপের আরও কিছু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার একই আশঙ্কায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছেড়ে যেতে দেখা যায় হোটেল ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিনকে। কথা হলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশে যাচ্ছি। আমার ছোট ছোট তিন সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মা, এদের নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে আগেভাগেই সরে যাচ্ছি।
এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। তবে দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকতে প্রত্যেক গ্রামে সচেতন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রসহ হোটেলগুলোর পাশাপাশি দ্বীপে সিপিপির ১ হাজার ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বীপের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই প্রবাল দ্বীপসহ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদের তীরে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও।
বিজ্ঞাপন
টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগে স্থানীয়দের জন্য উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশেষ জোন হিসেবে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপের জন্য নৌবাহিনীসহ বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, মেডিক্যাল টিমসহ স্বেচ্ছাসেবীদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, সাগরের বুকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বীপের জন্য আমাদের নৌবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দ্বীপে বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
ইউএনও জানান, ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে হোটেল-মোটেলসহ অর্ধশতাধিক আশ্রয়কেন্দ্ৰ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন খোলা হয়েছে। বিশেষ করে দুই দ্বীপের (সেন্টমার্টিন ও শাহপরী) বাসিন্দাদের সচেতনতার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আগে থেকেই উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আবহাওয়া অধিদফতরের ৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ দশমিক ০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিশেষ ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বৃহস্পতিবার (১১ মে) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হতে পারে।
প্রতিনিধি/আইএইচ

















































































































































































































































































