‘মুই ছোট হইতে গণেই দেহি মাঝের চরের এই অবস্থা! কোনোরকম বেড়িবাঁধ দেয়, হে আবার কোনো ঝড় তুফানে শেষ হয়ে যায়! আল্লাহরে কইছিলাম আমাগো জীবন যেমন গেছে যাক। কিন্তু মোগো গুরাগারায় যেন একটু ভালোভাবে থাকতে পারে। এহন দেহি গুরাগারা তো দূরের কতা নাতিনাতকুরগুলাও কষ্টে দিন কাটাইবে ভবিষ্যতে! টেকসি একটা বেড়িবাঁধ যদি দেতে তাইলে মোগো এত আতঙ্কে দিন কাটানো লাগতো না!’ আক্ষেপের সুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নুর জাহান বেগম।
শনিবার (১৩ মে) রাতে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঠান্ডা বাতাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠছে মাঝের চরের অসহায় মানুষগুলো। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে ও নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য প্রচার প্রচারণার কাজ করছে সিপিপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মাঝের চরের আরেক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বাঁধ না থাকায় প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে পুরো চর ভাসে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। ফসলের ক্ষেতও নষ্ট হয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটা বাঁধের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কার্যকর হয়নি।
সুরাতন বিবি বলেন, যখন থেকে ঘূর্ণিঝড়ের খবব শুনেছি, তারপর থেকে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। আমরা মরে গেলেও সমস্যা নেই! কিন্তু সবকিছু ভাবনা চিন্তা তো বালবাচ্চার জন্যই করি। আল্লাহ সবাইকেই রহমত করুক।
ইউনিয়ন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক তুহিন গাজী বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে টিম নিয়ে কাজ করছি। মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। মানুষ সহজে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না, অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলার সব নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে বরগুনা নদীবন্দর।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বরগুনার মাঝের চরের বদরখালীর গুলিশাখালী অংশে এক ব্যক্তির উদ্যোগে নির্মিত সাইক্লোন সেল্টারে ১০-১৫ জন বয়স্ক লোক রয়েছে। পাথরঘাটার কাকচিড়ার অংশে ১ হাজার থেকে ১২ শ বাসিন্দা রয়েছে।
কাকচিঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু ঢাকা মেইলকে জানান, মাঝের চরের দু’অংশের ২৫-৩০ জন সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে রাত ১০ টা পর্যন্ত। এছাড়া গৃহপালিত প্রাণীও সেখানে নেওয়া হয়েছে। সকলের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যদি আজ রাতে প্রয়োজন হয় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে।
প্রতিনিধি/এইউ