রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ঘূর্ণিঝড় মোখা: ‘সিডর’ বিধ্বস্ত শরণখোলায় আতঙ্ক

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৩, ১০:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

ঘূর্ণিঝড় মোখা: ‘সিডর’ বিধ্বস্ত শরণখোলায় আতঙ্ক

২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ বিধ্বস্ত বাগেরহাটের শরণখোলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সিডরের চেয়েও ভয়াবহ হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলায় বিরাজ করছে আতঙ্ক।

সিডরের সেই বিভীষিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তাদের। বিশেষ করে বলেশ্বর নদের তীররক্ষায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-২) বেড়িবাঁধে অস্বাভাবিক ভাঙন ও ফাটল দেখা দেওয়ায় বেশিটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পেড়েছেন এখানকা বাসিন্দারা।


বিজ্ঞাপন


ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি সভা করে সব ধরনের প্রস্ততি গ্রহণ করেছে শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন। ঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করাসহ শতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।

প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯১টি আশ্রয় কেন্দ্র। বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ কিছু এলাকায় চলছে মেরামত কাজ। কৃষি বিভাগ থেকেও মাঠের পাকা বোরো ধান কেটে তা সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকেদের। বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে মাছ ধরার শরণখোলার সকল জেলেকে কূলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

Soronkhola

বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকেটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে আতঙ্কের কথা শোনান বলেশ্বর পারের বাসিন্দারা। সাউথখালী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের পাশের গাবতলা বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম কারী, পারভেজ খান, মিজান হাওলাদার জানান, ঘূর্ণিঝড় আসার খবর শুনে তাদের ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সেই সিডরের কথা মনে পড়ছে। যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে সিডরের মতো জলোচ্ছ্বাস হলে এই বেড়িবাঁধ কোনোভাবেই টিকবে না।


বিজ্ঞাপন


উপজেলার রাজেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা মো. হেলাল খান বলেন, তাদের বাড়ির সামনে থেকে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধে কোনো সিসি ব্লক বসানো হয়নি। বাঁধ হস্তান্তরের আগেই মূল বাঁধেই ভযাবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিডরে এখান থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে তাদের গ্রামের ২৬ জন মানুষ মারা যায়। ঘূর্ণিঝড় মোখা আসার খবরে তাদের গ্রামের মানুষ আবার সেই বাঁধভাঙার আতঙ্ক করছেন।

স্থানীয় জেলে কুদ্দুস হাওলাদার ও সুমন আকন বলেন, তাদের বাড়ির সামনে রাজেশ্বর স্লুইস গেটসংলগ্ন মূল বাঁধের মাঝখান থেকে প্রায় ৫০ ফুট এলাকায় বিশাল ফাটল ধরেছে। বড় ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বা বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে তাদের সবকিছু আবার সিডরের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে সিইআইপি-২ এর ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রাকিবুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বলেশ্বরের ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধের বেশকিছু এলাকায় সিসি ব্লক সরে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই সেসব এলাকা মেরমতের চেষ্টা করা হবে। বুধবার (১০ মে) সকাল থেকে রাজেশ্বর পয়েন্টে নতুন করে ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া নদী ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্প পরিচালক বরাবর আবেদন পাঠানো হয়েছে।

Soronkhola

শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছি। মাঠের বেশিরভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। এখনও প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি আছে। তা দ্রুত কেটে নিতে বলা হয়েছে চাষিদের। এ ছাড়া সবজি ক্ষেতে যাতে বৃষ্টি বা জলোচ্ছ্বাসের পানি জমে না থাকে সেজন্য ক্ষেতের পাশে গভীর নালা কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে জরুরি সভা করে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৯১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ আছে। সিগনাল বাড়লে নদী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য সিপিপি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন এনজিওর সেচ্ছাসেব টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর