রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৩, ১০:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা পুরো শক্তি নিয়ে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে বলে আভাস ছিল আবহাওয়া অধিদফতরের। জানমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কেটেছে গত কয়েকটি দিন। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ কমিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় সর্বাত্মক ব্যবস্থা। অবশেষে রোববার (১৪ মে) দুপুরে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়টি। সেন্টমার্টিন-টেকনাফসহ কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় মোখা ব্যাপক তাণ্ডব চালালেও জানমালের বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের একটা বড় অংশজুড়ে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত এর মূল আঘাতটি পড়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে। সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে মোখা। মিয়ানমারে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। বাংলাদেশে যখন মোখা আঘাত করে তখন এর শক্তি অনেকটা কমে আসে। ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।


বিজ্ঞাপন


গতকাল শনিবার (১৩ মে) রাত পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় মোখার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। আবহাওয়ার গুমোট অবস্থা দেখে অনেকে ১৯৯১ সালের প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করছিলেন। সেই ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসাবেই লক্ষাধিক লোক মারা গিয়েছিল। কেউ কেউ এবারের ঘূর্ণিঝড়কে আইলা-সিডরের সঙ্গে তুলনা করছিলেন। আবার কারও কারও মতে এটি আম্পানের মতো তাণ্ডব চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

cox1

তবে শেষ পর্যন্ত মোখা তাণ্ডব চালালেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম বলেই মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২০ হাজার কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। লাখ লাখ গাছ উপড়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে ১১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও কারও মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। যদিও সবমিলিয়ে এই ক্ষয়ক্ষতিকে অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়া হিসেবেই দেখছে দেশবাসী।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজারে মূল আঘাত করলেও দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায়ও তাণ্ডব চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে কক্সবাজার ছাড়া অন্য কোনো উপকূলীয় এলাকায় বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বরিশাল-খুলনাসহ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি। রাজধানী ঢাকাতে দিনভর মেঘলা আকাশ থাকলেও দেখা মেলেনি বৃষ্টির। যদিও দেশের কোনো কোনো এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন


cox2

ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। রাতের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (১৪ মে) দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে দেশের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় এক হাজার ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ, কক্সবাজার জেলায় ৫৭৬টি কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক এবং সেন্টমার্টিনে সাড়ে আট হাজার লোককে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কিছুটা কাটার পর বিকেল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষেরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী, ৬৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আড়াই লাখ লোক নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ রাতের মধ্যেই বাড়িতে ফিরছে।

mokha3

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের ২২ নম্বর বিশেষ ও সিরিজের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং দুর্বল হয়ে সিটুয়ে, মিয়ানমারের স্থলে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।

এমতাবস্থায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।তবে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর