রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

মোখা আতঙ্ক: সাতক্ষীরা বাজারে আমের সরবরাহ থাকলেও নেই ক্রেতা

গাজী ফারহাদ
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

মোখা আতঙ্ক: সাতক্ষীরা বাজারে আমের সরবরাহ থাকলেও নেই ক্রেতা

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা! সেই আতঙ্কে বাগানে বাগানে এখন আম পাড়ার ধুম। ঘূর্ণিঝড়ে সব আম নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভেবেই পেড়ে ফেলছেন। এতে সাতক্ষীরার বাজারে আমের যোগান পর্যাপ্ত হলেও নেই ক্রেতা।

জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী আমের বাজার সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার। জেলা শহরের বিভিন্ন জয়গা হতে চাষিরা আম নিয়ে আসেন এই বাজারে। সাতক্ষীরার আমের গুনগতমান ভালো ও খেতে সুম্বাদু হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন পাইকারী দরে আম কিনতে। তবে এবছর আমের পর্যপ্ত সরবরাহ থাকলেও নেই ক্রেতা। তাই দাম নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা। এজন্য লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমচাষি ও ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে চাষিরা ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে আম সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসছে।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরার আম বাজারের প্রত্যেকটা গলি ছিল আমে পরিপূর্ণ। তবে আম ক্রেতাদের তেমন একটা দেখা মেলেনি। আম চাষিরা ভ্যানে, ঝুঁড়িতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না। দুই একজন আসলেও তারা যে দাম বলেছেন তাতে হতাশ হচ্ছেন আম চাষির ও ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ীরা।

আড়ৎদার মিজান, কামরুলসহ অনেকেই বলেন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক ঘোষিত আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ, গোবন্দিভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের দিন ১২ মে নির্ধারণ করে। যে কারণে চাষিরা বাগানের আম পাড়তে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ করে ওই তারিখ এগিয়ে ৫ মে করে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ফলে বাজারে আমের সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকায় আম পাড়ছে চাষিরা। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর এখনও পর্যাপ্ত ক্রেতা আসেনি। বাজারের সব আড়তে আমে সয়লাব হয়ে গেছে। কোনো আড়তে তিলধারণের ঠাঁই নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম উঠেছে সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তে। যে কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষি বা ব্যবসায়িরা।’ তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে বাইরের ক্রেতারা সাতক্ষীরায় তেমন আসছে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে আম বাগানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বড় বাজারে আম বিক্রি করতে এসেছি। তবে দাম শুনে মাথাঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। গত মৌসুমে গোবিন্দভোগ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মন বিক্রি করেছিলাম। তবে এ বছর আম ভেদে গোবিন্দভোগ আমের দাম বলছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বাইরে পর্যাপ্ত ক্রেতা না আসায় আমের দাম অনেক কমে গেছে। বাগান কেনা, পরিচর্যা, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ আম উৎপাদন খরচ পড়েছে কমপক্ষে ২ হাজার টাকার উপরে। বাজারে এমন দাম গেলে এ বছর আমার কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে।

Manggo


বিজ্ঞাপন


বড়বাজার কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, তীব্র গরমে কয়েক দিনের মধ্যে আম পেকেছে। তার মধ্যে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’, যে কারণে চাষিরা আম পেড়ে ফেলছে। ‘গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আমের চাহিদা অনেক কম থাকায় জেলার বাইরের আম ব্যবসায়ীরা এখনও আসেননি। তবে ১০ মে থেকে হিমসাগর আম সংগ্রহ শুরু হলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যাপ্ত আম ব্যবসায়ীরা বড়বাজারে আসবেন এবং আম ক্রয় করবেন। ফলে ক্ষুদ্র আম চাষিরা ও কৃষকরা লাভবান হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি। আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ৫মে প্রথম দফায় গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু করা হয়েছে। হিমসাগরের জন্য ১০ মে, ল্যাংড়ার জন্য ১৮ মে, আম্রপালি ২৮ মে দিন ধার্য করা হয়েছে।

আমের কাঙ্খিত দাম না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ১২ বা ১৩ মের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চাষি ও কৃষকরা অল্প সময়ের মধ্যে আম সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর