উপকূলের দিকে এগোচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। মোখার প্রভাবে দেশের ১০ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
উপকূলীয় প্রত্যেক জেলায় বিরাজ করছে ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্ক। আর ওইসব জেলাগুলোতে মাঠের ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে কাজ করছেন কৃষকরা। এই মুহূর্তের বোরো ধান দ্রুত কাটছেন চাষিরা।
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এই তিন অঞ্চলের ১৫টি জেলার ৯৪ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়। উপকূলের কোনো কোনো জেলায় শতভাগ কাটা হয়েছে বোরো ধান।
১২ মে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের এক তথ্যে জানানো হয়, চট্টগ্রামে ৮৬ শতাংশ, কক্সবাজারে ৯২ শতাংশ, নোয়াখালীতে ১০০ ভাগ, ফেনীতে ৯২ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এছাড়াও, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ১০০ ভাগ ধান কাটা শেষ। বরিশাল বিভাগের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়।
উপকূলের অন্যান্য জেলায়ও ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিসে তথ্য মতে, জেলায় ৮০ ভাগ ফসল কাটা সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ ফসল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকলেও থেমে নেই কৃষকরা। বরগুনায় মরিচ, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, মুগ ডাল ও ধান কাটতে ব্যস্ত দিনমজুর কৃষকরা। ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো আবাদ বেশির ভাগ ঘরে উঠেছে। মুগ ডাল ঘরে উঠেছে ৫ হাজার ৪৯৬ টন, চিনাবাদাম ২২৫ টন, মরিচ ১ হাজার ১৮২ টন ও সূর্যমুখী ৮৬ টন কাটা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বরিশালের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরোদমে চলছে মাঠে থাকা অবশিষ্ট পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিভাগের ৬ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার ২৩৩ হেক্টর জমিতে। বিভাগে ৬ জেলায় প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, যদি প্রবল শক্তি নিয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, তাহলে উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হবে। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসের কারণে পাকা ধান গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই উপকূলীয় এলাকায় ধান পেকে যাওয়ায়, তা কেটে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আর ধান কাটতে গত দুই দিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার কৃষকরা। এরমাঝে যারা শ্রমিক পাচ্ছেন না সেইসব কৃষক পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে এসেছেন ধান কাটায় সাহায্য করতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শওকত ওসমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে ফসল রক্ষার জন্য আগেভাগেই মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্ভব হয়েছে।
এর আগে গত ৯ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা সামনে রেখে পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। ফসলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকদের নির্দেশনা সরেজমিন উইং জাননায় ৮০ শতাংশ পাকা ধান, পরিপক্ব আম ও অন্যান্য ‘সংগ্রহ উপযোগী’ ফসল দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য কৃষকদের বলতে পরামর্শ দেন।
ডব্লিউএইচ/এএস