বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ক্ষতির আশঙ্কায় আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা। কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে ফসল বাঁচাতে আধাপাকা ধানই কেটে ঘরে তুলছেন তারা। ধান কাটতে শ্রমিকের পাশাপাশি প্রতিবেশী-আত্মীয়-স্বজনরাও সহযোগিতা করছেন।
রাজশাহীর দুর্গাপুরে গত বছরগুলোতে ঝড়ে কৃষকের বেশ ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি চলতি মৌসুমেও দুই দফা কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একই চিত্র মাদারীপুরেও।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইলের রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় বলছে, তারা ৮০ শতাংশ পাকা ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে কৃষকদের। কিন্তু মোখার ক্ষতির আশঙ্কায় অনেক জায়গায় জমিতে ৭০ শতাংশ বা তার কম পাকা ধানও কাটতে দেখা গেছে।
কৃষি অফিস জানায়, এ বছর উপজেলায় ৩ হাজার ৯৩৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মাঠে ৩০ শতাংশ ধান পেকেছে। আর সরেজমিন দেখা যায়, মাঠে এখনো ৮০ শতাংশ ধানই কাঁচা রয়ে গেছে। ফলে কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
উপজেলার কানপাড়া গ্রামের কাশেম, রবিউলসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, মৌসুমের শুরুতে ধানে শীষ আসার পরপরই ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে জমির প্রায় ৩০ ভাগ ধান ঝরে গেছে। এখন আবার ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের খবর পেয়ে আগেভাগেই আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছি।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, ৮০ ভাগ পেকেছে এমন ধান কাটলে কোনো ক্ষতি হবে না। তাই ঝড় ও ভারী বৃষ্টির আভাস পেয়ে কৃষকদের ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ মোখার প্রভাবে ঝড় ও ভারী বর্ষণ হলে কৃষকের আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা কৃষি অফিস ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পরামর্শ দিয়েছে কৃষকদের। জেলার ৫৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
মাদারীপুরের গৌদি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোরোর ফলন ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় আশঙ্কা তৈরি করেছে কৃষকদের মনে। যার ধান যতটুকু পাকা অবস্থাতেই আছে, চেষ্টা করছেন দ্রুত কেটে ফেলার।
এলাকার কৃষক মিলন ভূঁইয়া বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। মোটামুটি ভালো হয়েছে। আর সপ্তাহখানেক মাঠে থাকলে ধান পুরো পুষ্ট হতো। কিন্তু শুনছি শিগগিরই নাকি ঝড়-তুফান হবে। তাই আগেভাবেই ধান ঘরে উঠাচ্ছি, এত কষ্টের ফসল যাতে বেহাত না হয়।
আরেক চাষি আমজেদ মাতব্বর বলেন, গতবারও ধান পাকার শেষ দিকে ঝড় এসে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার আর সেই ভুল করব না, ক্ষতির আগেই ধান কেটে ঘরে তুলব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, মাদারীপুর জেলায় ইতিমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান পেকেছে। মাঠে এখনো ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচা ধান রয়ে গেছে। ফলে কৃষকদের আগেভাগে ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি।
/এইচই