প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় এরই মধ্যে বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩১শ একটি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৩৫টি মুজিব কেল্লা। এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৬ জন মানুষ অবস্থান করতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪৯০টি গবাদিপশুও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখা যাবে।
এরইমধ্যে বিভাগজুড়ে মাইকিংসহ জনসচেতনতামূলক কাজ শুরু করেছে ৩৯ হাজার ৪২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া বরিশাল থেকে ছোট-বড় লঞ্চসহসব ধরণের নৌযান চলাচল শনিবার সকাল ৬টা থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
বিজ্ঞাপন
মোখা’র প্রভাবে বরিশালের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরিশাল নদী বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বরিশালে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরী সভা করেছে। শনিবার বিকেলে নগরীর সার্কিট হাউজে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা থেকে জানানো হয়, এই ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ের জন্য ত্রাণসামগ্রীর আওতায় ২৭শ ০৮ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া নগদ ৫৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৪ টাকা, কম্বল ২০ হাজার ৭শ পিস এবং ঢেউটিন ৫৪৩ বান্ডিল ত্রাণ সহায়তার আওতায় রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগজুড়ে ৪৮টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কাজ করছেন ৩৯ হাজার ৪২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। ৩৫৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ভোলা জেলায় গবাদী পশুর জন্য কাজ করবে ২১টি টিম। এছাড়াও ২০ সহযোগী বেসরকারি সংস্থা কাজ করবে। বরিশাল জেলায় ৫৪১টি, পটুয়াখালীতে ৭০৩, ভোলায় ৭৪৬, বরগুনায় ৬৪২, পিরোজপুরে ৪০৭ ও ঝালকাঠিতে ৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী জেলায় ২৬, ভোলায় ০৬ ও বরগুনা জেলায় ০৩টি মুজিবকেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জরুরী সভায় রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, শেখ হাসিনা সেনানিবাসের লেফট্যানেন্ট কর্নেল হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কবির খান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হুমায়ন শাহিন খান, র্যাব ৮ এর উপঅধিনায়ক মেজর জাহাঙ্গীর আলম, মৎস্য অধিদফতরের বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম, কোস্টগার্ডের চীফ পেটি অফিসার বাবুল আক্তার, নৌ পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নৌ বন্দর কর্মকর্তা (যুগ্ম পরিচালক) আব্দুর রাজ্জাক জানান, অনাকাংক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ’র আদেশের পর ফলে শনিবার সকাল থেকে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে নৌপরিবহণ বন্ধ রয়েছে।
এই বন্দর কর্মকর্তা আরও জানান, বরিশাল নৌবন্দর থেকে স্বাভাবিক সময়ে অভ্যন্তরীণ ১১ রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে। দূরপাল্লার একমাত্র নৌরুট হচ্ছে ঢাকা-বরিশাল রুট। এছাড়া নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল আরও জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ যত স্থলভাগের দিকে ঢুকবে ততই বৃষ্টি বাড়তে পারবে। এটি আরও উত্তর এবং উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনিভ‚ত হয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মায়নানমার উপকূল অতিক্রম করবে।
এর প্রভাবে বরিশাল বিভাগে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়ার পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী আগামী ৪-৫ দিন এই অঞ্চলে বজ্রসহ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি