বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের কিছুটা প্রভাব শুরু হয়েছে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে হালকা বাতাস বইছে। সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে কক্সবাজারবাসীর মধ্যে তত আতঙ্ক বাড়ছে। কখন আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় মোখা এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত জেলার বাসিন্দারা।
আলাপকালে স্থানীয় কয়েকজন জানান, কয়েকদিন ধরেই মোখা আতঙ্কে ভুগছেন তারা। শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে হালকা বাতাস শুরু হয়েছে। ভোররাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
বিজ্ঞাপন
টমটম চালক কক্সবাজারের বাসিন্দা জয়নাল মিয়া শনিবার সারারাত শহরে টমটম চালিয়েছেন। রোববার (১৪ মে) ভোরে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। সবার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আমিও আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হইছি।’
আতিকুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা। ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে রয়েছি আমরা।’
কলাতলি ডলফিন মোড় এলাকায় গিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান খোলা দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি রেস্টুরেন্ট, একটি মুরগির দোকান ও একটি ওষুধের দোকান। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসা বাসগুলো থামছে ডলফিন মোড়ে। বাস থেকে যাত্রীরা নেমে সিএনজি অটোরিকশা করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
তারেক নামে এক যাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি কক্সবাজারে বাসিন্দা। কিন্তু ঢাকায় বসবাস করি। ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য বাড়ি এসেছি। বাড়িতে পরিবার-পরিজন সবার সঙ্গে থাকব।’
বিজ্ঞাপন
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়াও অর্ধশত আবাসিক হোটেল, বহুতল ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
কলাতলি ইউএনআই রিসোর্টের মোহাম্মদ শামসুদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের রিসোর্টে দুই ফ্লোর আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনো কেউ আসেনি।’
মোখা নিয়ে ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঝড়টি সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির চারপাশে বাতাসের ঘূর্ণন গতি ২২০ কিলোমিটারের বেশি। সে শক্তি নিয়েই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে মোখা।
ঢাকার আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মোখা শনিবার (১৩ মে) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
মনোয়ার হোসেন জানান, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুনঃ) ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুনঃ) ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত (পুনঃ) ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কেআর/এমআর

















































































































































































































































































