ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় দুই লক্ষাধিক দুর্গত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অবস্থান নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।
রোববার (১৪ মে) রাত ১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের প্রস্তুত করা সেন্টমার্টিনের ৩৭টিসহ জেলায় মোট ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন এসব দুর্গত মানুষ। সেন্টমার্টিনের ৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ হাজার স্থানীয় বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মোখা মোকাবিলায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। তারা সঙ্গে গবাদি পশুসহ অন্যান্য মালামালও নিয়ে এসেছে।
রোববার রাত ১টা পর্যন্ত এসেছে প্রায় দুই লক্ষাধিক। একই সঙ্গে এখনও মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অব্যাহত রেখেছে। সকাল হতেই এই সংখ্যা আরও বাড়বে। জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও অর্ধশত আবাসিক হোটেল, বহুতল ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আনা অব্যাহত রেখেছে।
বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ইতোমধ্যে প্রায় সব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে বর্তমানে ৬ হাজার মানুষ রয়েছে। দ্বীপের ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে তারা অবস্থান নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া মানুষকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে জরুরি মেডিকেল টিম। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় সর্বোচ্চ ৫লাখ ৯০হাজার দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মহেশখালীর ধলঘাটায় ঘরবাড়ি হারিয়ে শহরের নাজিরারটেকে বসবাস করা মুজিব উল্লাহ বলেন, তখন জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি ভাই বোন ও স্বজনদের হারিয়ে আমি নিস্ব হয়েছিলাম। ওই সময় ঘূর্ণিঝড়ে আমার পরিবারের তিনজন ছাড়া সবাই মারা যায়। আজ সেই ১৯৯১ সালের কথা মনে পড়ছে। আজ ৩২ বছর পর এসেও সেই ভয় নিয়েই ছুটছি। বড় অদ্ভুত জীবন আমাদের। এই উপকূলে বসবাস করা যেন আজন্ম পাপ।
আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া মরিয়ম বেগম বলেন, বাড়ি খালি রেখে এসে খুব খারাপ লাগছে। এখানে এসে সবকিছু পাচ্ছি, তবুও মনের মধ্যে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন।
শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে উপকূলে বসবাসকারী মানুষদের মাইকিং করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে পুলিশ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের মূল কেন্দ্র কক্সবাজার। এখানে প্রাণহানি রোধ, ক্ষয়ক্ষতি কমানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে পুলিশ মাঠে রয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না তাদের বুঝিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট জোয়ারের পানি বেড়েছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে হালকা বাতাস শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে গুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, দ্বীপের দুটি সাইক্লোন সেন্টার, স্কুল, আবাসিক প্রতিষ্ঠানসহ ২২টি দ্বিতল ভবন, ১৩টি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ভবন মিলে মোট ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে দ্বীপবাসী অবস্থান নিয়েছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করেছে আবহাওয়া অফিস।
প্রতিনিধি/এসএস