ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসছে উপকূলে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম কক্সবাজারসহ দেশের বেশকিছু এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ, কড়া রোদ নেই। তবে উপকূলের অনেক জেলায় আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি নেই।
শনিবার (১৩ মে) ভোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়। তবে তা পরিমাণে খুবই কম এবং স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ ছিল না।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া অফিসের সকালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও হাতিয়াতে ৮ মিলিমিটার, টেকনাফে ৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীতে সামান্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বরিশালের খেপুপাড়ায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
এদিকে, রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও বাহিরে কড়া রোদ নেই। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও তাপমাত্রার কারণে বেশ গরম রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে গরমে নগরবাসীর অস্বস্তি বেড়েছে। তবে মোখার প্রভাবে আগামীকাল থেকে ঢাকাও বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানা গেছে।
ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব কেমন পড়বে জানতে চাইলে সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে আবহাওয়া অধিদফতরে উপপরিচালক মো. আসাদুর রহমান শনিবার জানান, প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা যে ঢাকায় নেই তেমন না, তবে তুলনামূলক কম থাকবে। বেশি আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায়। তার একটা অংশ সিলেট অঞ্চলের দিকেও চলে আসতে পারে। ঝড়টি সিডরের মতোই শক্তিশালী হবে। যতক্ষণ সাগরে থাকবে ততক্ষণ শক্তি সঞ্চয় করতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীবাসী অবশ্যই দেশবাসীর জন্য দোয়া করবেন এবং সতর্ক থাকবেন। উপকূলীয় এলাকায় যাদের আত্মীয় স্বজন আছে তাদের খোঁজ-খবর রাখবেন।
বিজ্ঞাপন
আসাদুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকা এবং চরাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির প্রভাব থাকবে। তবে মূল ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়, যার ডায়ামিটার ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার। এর অধিকাংশ অংশ কক্সবাজার, উখিয়া ও সেন্টমার্টিন আর বাকি অংশ মিয়ানমারের উত্তরাংশ (সিটওয়ে) পাবে। এটি যখন তীরে চলে যাবে তখন ক্লাউড মাস্ক ছড়িয়ে সিলেট পর্যন্ত এর প্রভাব থাকবে।
পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে উল্লেখ করে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আসাদুর রহমান বলেন, একটানা আট ঘণ্টার বেশি প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে। প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে। সিলেটেও প্রভাব থাকবে।
এদিকে, মোখার প্রভাবে সকাল থেকেই আরও বেশি উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। উপকূলের জেলাগুলোতে বাসাত বইছে। শনিবার সকালে চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সৈকত কক্সবাজার এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সৈকত এলাকায় দর্শনার্থী খুবই কম। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। জেটি থেকে বড় জাহাজ বের করে বর্হিনোঙরে পাঠিয়ে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে লাইটার জাহাজকে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় নিরাপদে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোখার কারণে শনিবার ভোর ৬টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পরদিন রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও পায়রায় ৮ নম্বর এবং মোংলায় ৪ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ডব্লিউএইচ/এমএইচটি