আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট মোখা। আবহাওয়াবিদরাও বলছেন সে কথাই। তাদের ধারণা, স্থলভাগে ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হানতে পারে মোখা। হতে পারে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
আবহাওয়াবিদদের মতে- বর্তমান গতি প্রকৃতি অনুযায়ী দিক পরিবর্তন না করলে আগামী রোববার (১৪ মে) কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে মোখা।
বিজ্ঞাপন
মোস্তফা কামাল পলাশ একজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন গ্লোবাল মডেল বিশ্লেষণ করেন তিনি। তার মতে- মোখার অগ্রভাগ আগামী ১৪ মে সকাল ৬টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। মাঝের অংশ দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে ১৫ মে ভোর পর্যন্ত উপকূল অতিক্রম করতে পারে এটি।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই আসছে ঘূর্ণিঝড়টি। তিনি বলেন, কক্সবাজার অঞ্চলে কিছু প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে টেকনাফের ওপর দিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে যে গতিপথ দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশটা টেকনাফ ছুঁয়ে যাবে। হয়তো টেকনাফের একটু দক্ষিণ দিক অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে।
কতটা শক্তিশালী মোখা?
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন সময়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের দুটি মৌসুম রয়েছে। একটি বর্ষার আগে, অর্থাৎ এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসে। আরেকটি বর্ষার পরে, অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, এই দুই সময়ে সি সার্ফেসের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। বায়ুমণ্ডলের বিন্যাসও ফেভারেবল হয়। সূর্য যখন এক গোলার্ধ থেকে আরেক গোলার্ধে যায়, তখন এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরের ওপরে থাকে। ফলে বঙ্গোপসাগর অতি উত্তপ্ত হয়ে যায়। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠে যে পানি আছে তা সুপ্ত তাপ নিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এটা বায়ুমণ্ডলে যত প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় তত শক্তিশালী হয়। মূলত এই কারণে এ সময় ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপাসগরে কোনো নিম্নচাপ, লঘুচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। ফলে মোখাই হতে যাচ্ছে চলতি বছরে প্রথম ঘূর্ণিঝড়। সেকারণে পুরো মৌসুমটায় সূর্য থেকে আগত রশ্মি পুরোটাই বঙ্গোপসাগরের পানি উত্তপ্ত করেছে। এতে বঙ্গোপসাগরের পানিতে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গেল ক’বছরের মধ্যে মোখা সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার পানিতে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এখন বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রার যে মানচিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে, যত উত্তর দিকে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হবে তত বেশি এটি উত্তপ্ত পানির সংস্পর্শে আসবে। এছাড়া শক্তি ধরে রাখতে যে তিনটি উপাদান প্রয়োজন তার সব ক’টিই রয়েছে মোখায়।
সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির ওপরে এবং সমুদ্রে সঞ্চিত শক্তিযথেষ্ট পরিমাণে আছে, ফলে ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বড় হবে। তারা আভাস দিয়েছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আছড়ে পড়তে পারে এটি।
এইউ