সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বঙ্গোপসাগর থেকে শতশত মাছ ধরার ট্রলার ফিরছে বন্দরে

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৩, ১২:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বঙ্গোপসাগর থেকে শতশত মাছ ধরার ট্রলার ফিরছে বন্দরে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ব্যাপক শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরও শক্তিশালী রুপ ধারন করে ১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ০৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। 

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ক্রমশই উক্তল হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। ফলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জাল-দড়ি গুটিয়ে তীরে ফিরছেন। ইতোমধ্যে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আশ্রের  নিতে ফিরছে শতশত ট্রলার। বিভিন্ন জেলা থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে আসা শতশত ট্রলার পাথরঘাটার বিভিন্ন খালে ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


পাথরঘাটার চরধুয়ানী এলাকার বিডি ট্রলারের মাঝি হাসেম আলী বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ শিকার করছিলাম আমরা। বৃহস্পতিবার থেকে সাগর কিছুটা উত্তাল হয়ে ওঠলে। ঢেউয়ের তীব্রতা দেখে আমরা পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হয়ে শুক্রবার বিকেলে ঘাটে এসে পৌঁছাইছি। আমাদের ট্রলারের সকল জেলেরা নিরাপদে আছে।

কাকন মাঝি বলেন, বঙ্গোপসাগরে আমরা যেখানে মাছ ধরছিলাম সেখানে তেমন ঢেউ ও বাতাস ছিল না। তবুও আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও সাগরের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে জাল-দড়ি গুটিয়ে কুলে ফিরে ঘাটে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা সবাই নিরাপদে আছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের কোনে বঙ্গবসাগরে তেমন উত্তাল না হলেও পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, মাছের খাল, পদ্মা ও চরদুয়ানী এলাকার বিভিন্ন খালে শত শত ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে। এখনো অনেক জেলে গভীর সাগর থেকে তীরের উদ্দেশে রওনা করেছে। অনেক জেলেরা আজকে রওনা দিবে। অনেক জেলেদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করতে পারিনি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।

ইতোমধ্যে বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বরগুনায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়াও জেলায় ৯ হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ২৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ১৪২ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি জরুরি সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

আজকের আবহাওয়া বার্তা, আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ (ECP: 966 HPA) উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৫.৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল (১৩ মে ২০২৩) ০৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি.দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। 

এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ১৪ মে ২০২৩ সকাল ০৬ টা থেকে সন্ধ্যা ০৬ টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ রাত (১৩ মে ২০২৩) থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুন:) ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত (পুন:) ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত
অলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধ্বস হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর