রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘হাত-পা ধরার বাকি, তবু মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না’

আজিজ আজহার
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘হাত-পা ধরার বাকি, তবু মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না’

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌর এলাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত হয়ে থাকা সাইক্লোন শেল্টারগুলো। তবে শনিবার সন্ধ্যায় পর্যন্ত কোনো শেল্টারে লোকজন আসেনি।


বিজ্ঞাপন


মিরসরাই উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছি। পৌরসভা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সাথে সভা করে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার ঢাকা মেইলকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সভা করে গতকাল রাত থেকে আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক টিম ও ছাত্রলীগের কর্মীরা দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে জনসাধারণকে সচেতন করতে চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের পক্ষে মাইকিং করা হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা সিপিপি টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার বলেন, ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আমাদের ৮০টি টিম মাঠে থাকবে। ৮০ টিমে এক হাজার ছয়শ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। যারা নিজ নিজ ইউনিটে প্রচারে কাজ করছে। একটি টিমে ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে আমাদের মাইকিং চলছে। এছাড়াও মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হাত-পা ধরার বাকি আছে শুধু। তবুও মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না।


বিজ্ঞাপন


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পন কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ আমরা ১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করেছি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক বলেন, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়নগুলোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

sss

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও রোববার (১৪ মে) শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকবে।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, প্রয়োজনীয় ইকুয়েপমেন্টসহ আমাদের তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে।

মিরসরাইয়ের সামাজিক সংগঠন সোনালী স্বপ্ন পাঠশালার পরিচালক মঈনুল হোসেন টিপু বলেন, উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বেড়িবাধ এলাকার মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সকাল থেকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সামাজিক সংগঠন দুর্বার প্রগতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসান সাইফ উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় দুর্বার প্রগতি সংগঠনের দুটি টিম প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী যেকোনো কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য। এছাড়াও আমাদের সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে ৮ নাম্বার মহাবিপদ সংকেতের তিনটি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখনো পর্যন্ত কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। তারা বলছেন, আমাদের গৃহ-পালিত পশু আছে। যদি পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখা দে, তাহলে আমরা রবিবার সকালে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাবো।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর